লালপুরে চলছে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : লালপুর উপজেলা জুড়ে অবাধে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। আর এই মাটি নিয়ে গিয়ে ইটভাটায় পুড়িয়ে ইট তৈরি হচ্ছে। এসব মাটি খোকো প্রভাবশালী চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা দুই তিন ফসলি উর্বর জমি, উঁচু ভিটা, পদ্মার চর, এমনকি ক্ষুদ্র বিল কোন কিছুই বাদ পড়ছে না। মাটি কেটে বানানো হচ্ছে গভীর পুকুর। এর ফলে একদিকে যেমন এলাকার উর্বর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট। নাটোর জেলায় কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে গত ২০১৯ সালের ১২ মে হাইকোর্টে একটি রিট শুনানি করেন। এ সময় জেলার পাঁচটি উপজেলার অভ্যন্তরে কৃষিজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ফসলি জমিতে নতুন করে ২০টি পুকুর খনন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এবং সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবাদী জমির শ্রেনি পরিবর্তন করে পুকুর খননের মহোৎসবে মেতেছে মাটি খেকোরা। উপজেলার লালপুর সদর, বিলমাড়িয়া, আড়বাব, অমৃত পাড়া, মহারাজপুর, দুড়দুড়িয়া, কদিমচিলানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুই-তিন ফসলি জমি থেকে ভেকু দিয়ে অবাধে মাটি কেটে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে পাঁকা রাস্তা। পাঁকা রাস্তায় ভেঙে ধুধু বালুতে পরিণত হয়েছে। আশেপাশের বসতঘর আর গাছপালা ছেয়ে গেছে সেই ধুলোয়। মানববন্ধন করেও এর প্রতিকার পান নি এলাকাবাসী। সন্তোষপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলেন, দিনরাত মাটি কাটা চলে। মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ভারী ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও গাড়ির শব্দ ও ধুলার কারণে বাইরে বের হওয়া যায় না। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, আবাদি জমি কেটে গভীর করা হচ্ছে। বাড়িঘরে ধুলোর স্তুপ জমে গেছে। তা ছাড়া সারা দিন রাত এস্কেভেটর ও ট্রাকটরের শব্দে ঘুমাতে পারি না। পুলিশ প্রশাসনকে মুঠোফোনে জানালেও এর কোন প্রতিকার হয় না। মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে তারা কিছু বলার সাহস পান না। এবিষয়ে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, আমি মাটি কাটার বিপক্ষে। অবৈধভাবে কেউ ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে, তবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করলে পুলিশ ফোর্সসহ আমি নিজে উপস্থিত থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, সব সময় অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং এটা অব্যাহত থাকবে। গত দুই মাসে মোবাইল কোর্টের মাধ্যেমে ১০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। যদিও অনেক গভীর রাতে কিছু জায়গায় মাটি কাটার চেষ্ঠা করলে আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেয়। অভিজ্ঞমহল মনে করেন এখনই ফসলি জমির মাটি কাটা থেকে বিরত করা না গেলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শস্যভান্ডার সমৃদ্দ হবে না। তাই তারা মনে করেন এ সকল ভূমিখেকোরা আর যাতে জমির মাটি কাটতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।