শাহেদের গোপন আস্তানায় যেতেন কারা?
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৫, ২০২০ , ১০:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদের গোপন আস্তানায় কারা যেতেন, সেই খোঁজ শুরু করেছে গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে শাহেদ ওই গোপন আস্তানায় কী করতেন ও সেখানে কারা যেতেন, তাদের নাম তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাচ্ছেন। ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারেও কাজ করছেন তদন্তকারীরা।
বুধবার সকালে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় এনে তাকে নিয়ে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার জাল বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়।
ভিআইপি প্রতারক শাহেদ করিম বহুমুখী ব্যবসার নামে বিভিন্ন পরিচয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। আর প্রতারণার জন্য ব্যবহার হতো এ গোপন আস্তানা। এখানেই বসে বৈধ-অবৈধ পন্থায় কাজ বাগিয়ে নিতে কাউকে টাকা দিতেন, কাউকে উপহার দিতেন ‘সুন্দরী নারী’।
আবার কাউকে কাউকে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন। সুন্দরী নারীই ছিল সাহেদের ব্যবসায়িক সাফল্য ও উপরে উঠার হাতিয়ার। এই ‘সুন্দরী নারী ব্যবসার’ কারণে তার স্ত্রী সাদিয়া আরবি রিম্মি সংসার ছেড়ে বাপের বাড়ি সিলেট চলে গিয়েছিলেন।
সূত্রে জানা যায়, শাহেদ দেহব্যবসা, ব্লাকমেইলিংসহ নানা অপকর্ম চালিয়েছেন এই গোপন আস্তানায়। এ আস্তানায় এটি কক্ষকে বানিয়েছিলেন রঙ্গশালা। এখানে পাওনাদারদের ডেকে জালটাকাও দিতেন শাহেদ। কখনো সুন্দরী নারী লেলিয়ে দিয়ে হেনস্তা করা হতো। লোকলজ্জার ভয়ে টাকা না নিয়েই চলে যেতে হতো মানুষকে। এছাড়ও অনেক সময় সুন্দরী নারীদের দিয়ে বেকায়দায় ফেলতেন শাহেদ। ওই ফ্ল্যাটে সমাজের উচ্চপর্যায়ের অনেক লোকের যাতায়াত ছিলো। অনেককে এনে ব্ল্যাকমেইল করা হতো।
শাহেদ দামি গাড়িতে চলাফেরা করতেন। তিনজন বডিগার্ডসহ সব সময় গাড়িতে একজন সুন্দরী নারী থাকতো। তাকে তিনি ব্যক্তিগত সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দিতেন। শাহেদের গাড়িতে এক-একদিন এক একজন সুন্দরী নারীকে দেখা যেত। সবাইকেই তিনি ‘ব্যক্তিগত সেক্রেটারি’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
বুধবার ভোররাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সাকড়া বাজার এলাকার থেকে শাহেদকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা র্যাব। পরে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯ এর প্রায় ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ছয় হাজারের মতো ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন। এছাড়া শাহেদ একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, অন্য দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে টাকা চেয়ে বিল জমা দিয়েছেন। এছাড়াও শাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার আরো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, রিকশাচালক, বালু ব্যবসয়ীদের সঙ্গে ব্যবসার নামে প্রতারণা ছাড়াও এমএলএম ব্যবসার নামে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়ার খবরও মিলেছে। তার বিরুদ্ধে পঞ্চাশটির বেশি মামলা আছে, এরকম শোনা গেছে। আমরা যাচাই করে দেখছি।
শাহেদ গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে অনেকেই র্যাব কার্যালয়ে অভিযোগ করছেন। সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন-জানতে চাইলে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, যারা আসছেন তাদের আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শাহেদকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে তুলে দেয়া হবে। র্যাবের মামলাটি এখন ডিবিই তদন্ত করছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ৬ জুলাই সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয় র্যাব। এ ঘটনায় ১৭ জনকে আসামি উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়।