শাহেদের বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন র্যাবের ডিজি
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৫, ২০২০ , ৩:৫৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদের প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, শাহেদ সাতক্ষীরা এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু র্যাব তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শাহেদের বিরুদ্ধে ৫৯টি মামলা রয়েছে। তিনি করোনার ভুয়া পরীক্ষার রিপোর্ট দিতেন। এতে রোগীর কাছ থেকে তিনি অর্থ নিয়েছেন। আবার সরকারের কাছ থেকেও তিনি অর্থ নিয়েছেন। র্যাব মহাপরিচালক জানান, শাহেদকে নিয়ে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক জাল টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, শাহেদ খুবই চাতুর্যের সঙ্গে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করতেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি এ কৌশল নিলেও তাকে অনুসরণ করেছে র্যাব। শাহেদ এর মধ্যে একাধিকবার ঢাকায় এসেছেন এবং ঢাকার বাইরে গিয়েছেন। কখনো তিনি নিজের গাড়ি ব্যবহার করেছেন আবার কখনো বাইরের গাড়ি ব্যবহার করেছেন। হেঁটেও বেড়িয়েছেন। এর আগে বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা মামলার প্রধান পলাতক আসামি ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমকে বুধবার সকালে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৫ জুলাই) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরা সীমান্তের দেবহাটা থানার সাকড় বাজারের পাশে অবস্থিত লবঙ্গপতি এলাকা থেকে নৌকায় পালিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাহেদকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী স্থানীয় একজন কালোবাজারির মাধ্যমে ডিঙ্গি নৌকায় চেপে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সেই সময় র্যাবের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে।
এর পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে র্যাবের একটি দল এ অভিযান শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টার অভিযান শেষে তাকে আবারও র্যাব সদর দফতরে নেয়া হয়। অভিযানে শাহেদের বাসায় বিপুল পরিমাণ জাল টাকা পাওয়া গেছে বলে সময় নিউজকে নিশ্চিত করেছিল অভিযানে অংশ নেয়া আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর একটি সূত্র।
এদিকে কোভিড চিকিৎসায় রিজেন্ট হাসপাতাল দেয়া শাহেদের চাল ছিল, এটা আমরা বুঝতে পারিনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বুধবার (ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। শাহেদের বিষয়ে আরও অধিকতর তদন্ত করা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া দুর্নীতিবাজ কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে র্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। ৭ জুলাই করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র্যাব।
মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এরপর থেকেই পালিয়ে ছিলেন শাহেদ। তাকে গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। অবশেষে সাতক্ষীরা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তারা।
এর আগে, করোনার নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণার একই অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যার পর গাজীপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়।
এর পরপরই রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা (মামলা নম্বর- ৫) করে র্যাব। এর মধ্যে শাহেদসহ ৯ জন গ্রেফতার রয়েছেন। ওই মামলায় শাহেদসহ নয়জনকে পলাতক হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন-রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ (৪৩), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজ (৪০), অ্যাডমিন আহসান হাবীব (৪৫), এক্সরে টেকনিশিয়ান হাসান (৪৯), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হাকিম আলী (২৫), রিসিপশনিস্ট কামরুল ইসলাম (৩৫), রিজেন্ট গ্রুপের প্রজেক্ট অ্যাডমিন রাকিবুল ইসলাম (৩৯), রিজেন্ট গ্রুপের এইচআর অ্যাডমিন অমিত অনিক (৩৩), গাড়িচালক আব্দুস সালাম (২৫), নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ খান জুয়েল (২৮), হাসপাতালের কর্মচারী তরিকুল ইসলাম (৩৩), স্টাফ আব্দুর রশিদ খান (২৯), স্টাফ শিমুল পারভেজ (২৫), কর্মচারী দীপায়ন বসু (৩২) এবং মাহবুব (৩৮)। দু`জনের নাম জানা যায়নি।