আজকের দিন তারিখ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: নৌপথ সুরক্ষিত হবে কবে?

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: নৌপথ সুরক্ষিত হবে কবে?


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৬, ২০২১ , ২:৩৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


শীতলক্ষ্যায় আবারো লাশের মিছিল দেখল দেশবাসী। রবিবার সন্ধ্যায় একটি লাইটারজাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী সাবিত আল হাসান লঞ্চ ডুবে যায়। লঞ্চে অর্ধশতাধিকের বেশি যাত্রী ছিল। রাতেই ২৯ জন সাঁতরে তীরে ওঠেন। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত শিশু, নারী ও পুরুষ মিলে ২৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌদুর্ঘটনা ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি। এ পথে দুর্ঘটনা এড়াতে রাতের বেলা লাইটারজাহাজ চলাচল বন্ধের দাবি করা হচ্ছে বারবার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমলে নিচ্ছে না। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই কিছু দিন আলোচনা হয়। স্বজনহারার আর্তি, মানুষের আহাজারি, ডুবন্ত নৌযান উদ্ধার করতে না পারার ঘটনা সর্ববিদিত। এসব ঘটনা সংবাদমাধ্যমে বড় হেডলাইন ও টিভির স্ক্রিনজুড়ে প্রচার হয়। তারপর সেই একই দৃশ্য- লাশের সারি, অসহায় স্বজনের প্রলাপ-বিলাপ, নৌপথের বাতাস ভারি হয়ে ওঠা। এমন মর্মাহত ঘটনা আর দেখতে চাই না আমরা। নদীমাতৃক দেশে নৌযানই চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম আজো। দেশের মোট যাত্রী সংখ্যার ৩৫ শতাংশ নৌপথে চলাচল করে। মোট পণ্যের ৭০ ও তেলজাত দ্রব্যের ৯০ শতাংশ নৌপথে পরিবহন করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি মানুষ দেশের নৌপথে যাতায়াত করেন। যৌক্তিক কারণেই নৌপথ জনপ্রিয়, সহজলভ্য এবং আরামদায়ক ভ্রমণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত অথচ এ নৌপথ কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিয়মিত প্রাণহানিরও। প্রতি বছর এপ্রিল, মে, জুন ও অক্টোবরে নৌদুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি। যান চালনায় নিয়ম না মানা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে লঞ্চ বা ফেরি পরিচালনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এবং যান্ত্রিক ত্রুটি এমন নানা কারণে নৌপথে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো নৌদুর্ঘটনার ফলে আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের প্রাণের বিনিময়েও আমরা ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করার কোনো শিক্ষা গ্রহণ করিনি। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই যথারীতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তদন্তের রিপোর্টও জমা হয়। কিন্তু সুপারিশমালার বাস্তবায়ন বা দায়ীদের শাস্তির নজির না থাকায় একই ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী লঞ্চ মালিক কিংবা মাস্টারদের বিরুদ্ধে মামলা হয় নৌআদালতে। বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ (আইএসও-১৯৭৬) অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ দোষী ব্যক্তিদের পক্ষে শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না। মামলাগুলো দীর্ঘদিন চলার পর নিষ্পত্তি হলেও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে এমন নজির নেই। তাছাড়া দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি নৌআদালতে মামলা করতে পারেন না। তাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে মামলা করতে হয়। নানা জটিলতার কারণে দায়ী কেউই শেষ পর্যন্ত শাস্তি পায় না। শীতলক্ষ্যায় দুর্ঘটনার তদন্তেও ইতোমধ্যে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার মধ্যে এমন ভয়ঙ্কর নৌদুর্ঘটনার জন্য যে বা যারাই দায়ী হোক তাদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।