শেয়ার কারসাজিদের শনাক্ত করতে ডিএসইর সাঁড়াশি অভিযানে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১ , ২:৪৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : স্বল্প-মূলধনী, লোকসানি, উৎপাদন বন্ধ থাকা এবং নামমাত্র আয়ের কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক হারে শেয়ারদর বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে শেয়ারবাজারে তৈরী হতে পারে অস্থিতিশীলতা। বাজারকে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পেয়ে যেসব শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৪০-এর বেশি রয়েছে, সেসব শেয়ারে নিয়ম বহির্ভূতভবে মার্জিন ঋণ দেয়া হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
এর আগে গত বুধবার (০৮ সেপ্টেম্বর) শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ৪০-এর বেশি পিই রেশিওর শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ তদন্ত করতে ডিএসইকে লিখিত নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএসই পরেরদিনই তদন্ত শুরু করে। অতিমূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর অর্থাৎ ৪০ পিইর বেশি শেয়ারগুলো কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের মার্জিন ঋণসুবিধা দেওয়া হচ্ছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখছে ডিএসই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ডিজিএম শফিকুর রহমান দিনের শেষেকে বলেন, বিএসইসির নির্দেশনার পর ডিএসইর পক্ষ থেকে ব্রোকার হাউজগুলোতে সরাসরি গিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ এর বেশি হলে সে কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন দেওয়া হচ্ছে কি না সে বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসইর সদস্যরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তিনি আরও বলেন, হাউজগুলোকে তদারকি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। তারপরও বিএসইসি থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিধায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ারের পিই চল্লিশের বেশি সেসব কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কেন বেড়েছে তা জানতে কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। শেয়ারবাজারের ঝুঁকি কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, বছরের পর বছর আর্থিক হিসাব দেয় না বা লোকসানি কোম্পানির কোনো পিই রেশিও হিসাব হয় না, এমন অর্ধশতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়ে অবস্থান করছে কয়েকগুণ বেশি দরে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি কোম্পানি রেনউইক যজ্ঞেশ্বর লোকসানে থাকলেও এর শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ৩৯৫ টাকায়। মুন্নু অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৪১৬ পিই রেশিওতে। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী আঁশ ৫৩২ পিই রেশিও, অ্যাম্বি ফার্মা ৫৯৬ পিই রেশিও, সোনালী পেপার ১৩৬ পিই রেশিও, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৪৪ পিই রেশিও, আরামিট ৯৪ পিই রেশিওতে লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে আরও বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের শেয়ারদর আকাশচুম্বী কিন্তু লোকসানি হওয়ায় পিই রেশিও গণনা করা হয় না। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কোনো কারণ ছাড়াই ফুলেফেঁপে উঠেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ইপিএস অনুযায়ী, গত বুধবার দিন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৪৫ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৭২টির পিই রেশিও ছিল ৪০ থেকে ৪৬৯২, যা মোট শেয়ারের প্রায় ২১ শতাংশ। পিই রেশিও ১০০-এর ওপরে রয়েছে ৩৩টি শেয়ারের। গত সোয়া এক বছরে এসব শেয়ারের বাজারদর দ্বিগুণ থেকে সাড়ে ১৮ গুণ হয়েছে। ৫০ থেকে ৯৩ শতাংশ বেড়েছে ১৯টির।
বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৫ মাসে শেয়ারজারের উত্থানে বহু শেয়ারের বাজার দর বেড়েছে। নানা পর্যায় থেকে অভিযোগ আসছে, অনেকগুলো শেয়ারের দরবৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ ছিল না। কেউ কেউ কারসাজির অভিযোগও করছেন। তাই যেসব শেয়ারের পিই ৪০-এর ওপরে, সেগুলোর দর বৃদ্ধির কারণ কী, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে