সফল ভিডিও নির্মাতা এবং একজন অন্তর হাসান
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৪, ২০২৩ , ৩:৫১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: বিনোদন
দিনের শেষে প্রতিবেদক : রাতে ঘুমাতেন কমলাপুর রেল স্টেশন। আর দিনে একটু কাজের সুযোগের জন্য ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন অডিও-ভিডিও কোম্পানির দুয়ারে দুয়ারে। কারন- স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হবেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকায়। তখন ২০০৯ সাল। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনই হয় তার বাসস্থান। এভাবে কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর কমতে থাকে পকেটের টাকাও। কোনো রকম খেয়ে, দিন পার হতো তার। কিন্ত কোনো কোম্পানিই সেভাবে পাত্তা দেয়নি তাকে। কেউ কেউ আবার বসিয়ে রেখেছিলেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে ঢাকায় কিছু না করতে পেরে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আবারও বাড়ি ফিরে যান তিনি। সালটা তখন ২০১১। অভিনয়ের ইচ্ছেটা চাপা দিয়ে, নিজ গ্রামের কয়েকজন বন্ধু মিলে নরমাল ক্যমেরা দিয়ে নির্মাণ করতে থাকেন ভিডিও। কিছু ভিডিও বানানোর পর পরিবারের লোকজনের চোখে পড়লে তাদের এসব পছন্দ না হওয়ায় বাড়ি থেকে বের করে দেয় তকে। নিরুপায় হয়ে এলাকারই হৃদয় নামে এক বন্ধুর বাসায় তখন ঠাই হয় তার। ঐখানে থাকা অবস্থায় ফেসবুকে পরিচয় হয় কন্ঠশিল্পী এফ এ সুমনের সাথে। এভাবে চলতে চলতে ২০১৪ সালে এফ এ সুমন সাথে দেখা করার সুযোগ পান তিনি। একদিন এফ এ সুমনের সাথে দেখা করতে এসে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলেও ঐদিন সুমনের ব্যস্ততার কারনে আর দেখা হয়নি। মনটা যেন আরো খারাপ হয়ে যায় তার।
একদিকে প্রিয় মানুষটির সাথে দেখা করতে না পারা। অন্যদিকে পকেটের টাকাও প্রায় শেষ। তখন, আবারও সেই কমলাপুর রেল স্টেশনেই রাত কাটান তিনি। পরের দিন কোনো কিছু না খেয়ে বিকালে সুমনের সাথে দেখা করার সুযোগ পান তিনি। কথাও হয় সুমনের সাথে। রাত তখন ১০টা। কিন্তু আজও বাড়ি যাওয়া হবে না ভেবে আবারও রেল স্টেশনেই রাতে থাকার জন্য প্রস্তুতি নেন তিনি। কিন্ত তার ভাগ্য যেন আরো খারাপের দিকে। স্টেশনে যাওয়ার সময় বাবার দেয়া শেষ স্মৃতির মোবাইলটিও কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ক্ষুধা। হতাশা আর বুকে কষ্ট নিয়ে স্টেশনে রাত কাটিয়ে পরের দিন লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফিরে যান তিনি। একমাস পর এফ এ সুমন তাকে ফোন করে একটি কাজের প্রস্তাব দেন। কাজটি ছিল অডিও-ভিডিও কোম্পানি জি-সিরিজের। পাশাপাশি এই কাজটি ছিল তার পরীক্ষাও। বাজেটের দিকে চিন্তা না করে সেই সুযোগ হাত ছাড়া করেননি তিনি। ‘ভালোবাসার ছেড়া ফুল’ শিরোনামের ভিডিওটি বানানোর পর জি-সিরিজ-এরও পছন্দ হয়। ভাগ্য কিছুটা সহায় হয় তার। এরপর আরো অনেকগুলো কাজ করার সুযোগ পান তিনি । তখন এফ এ সুমন তাকে ছোট ভাইয়ের মতো নিজের বাসায় থাকার সুযোগ করে দেন। এরপর ২০১৭ সালে পরিচয় হয় সংগীতপরিচালক ও কন্ঠশিল্পী রিয়েল আশিকের সাথে। ঐ সময় রিয়েল আশিকও তাকে সহযোগিতার হাত বাড়ান। তারপর আরো বেড়ে যায় কাজের পরিধি। একের পর এক কাজ করতে থাকেন তিনি।
নির্মাণ করেছেন- দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী থেকে শুরু করে নতুনদের গানের মিউজিক ভিডিও। বর্তমানে যার নির্মাণ করা গানের সংখ্যা ৫শর উপরে। শুধু তাই নয়- পরিচালনা করেছেন কয়েকটি নাটকও। তিনিই আজকের সফল ভিডিও নির্মাতা অন্তর হাসান। তার পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য মিউজিক ভিডিওর মধ্যে রয়েছে- কন্ঠশিল্পী এফ এ সুমনের – ‘মন বড় বেইমান’, ‘বুকের বা পাশে তুই’, ‘বদ দোয়া’, ‘বোবা মন’, ‘মনের রানী’, ‘জেলখানার প্রবাস’, ‘তোমার আমার গল্প। মোহাম্মদ মিলনের – ‘তোমার মতো একটা তুমি’, ‘কেন বন্ধু আমার হইলি না’। সৈয়দ অমির – ‘ও জান রে’ , ‘মন ভাংলো’, ‘পরাণ পাখী বন্ধু’, সমস্ এর ‘জ্বলে বুকে আগুন’, ‘ভুলিতে পারি না’। সাদমান পাপ্পুর – ‘বন্ধু আমার হারিয়ে গেছে’, ‘অন্তরে দেয় ব্যথা’, ‘ভারতের কেশব দের- ‘রঙিন ঘুড়ি’, ‘আজ তোর বিয়ে’ ইত্যাদি। এখন কাজ করছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘অন্তর মাল্টিমিডিয়া’ নিয়ে। তবে এ চ্যানেলটি দার করানোর পেছনে কন্ঠশিল্পী সামস্ এর প্রতি কৃতজ্ঞও তিনি। ময়মনসিংহ নান্দাইলে জন্ম হওয়া অন্তর এখন স্বপ্ন দেখেন- তার নিজের কোম্পানিটিও একদিন দেশের আর দশটি বড় কোম্পানির মতোই সুনাম কুড়াবে।