প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দেড় ডজন দল অংশ নিলেও মূল লড়াই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা নবম সংদের বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে। অনিয়ম-সহিংসতায় পরস্পরকে দোষারোপও করছে দল দুটো।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইসির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে কাজী রকিব বলেন, “ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির ব্যাপার নেই। আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। সুষ্ঠুভাবে তা করে আনতে চেষ্টা করেছি, সব থেকে ভালোটা করতে চেয়েছি আমরা। গুটিকয়েক মারামারি ও বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।”
গত ফেব্রুয়ারিতে এই ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। তার মধ্যে পাঁচ ধাপের ভোটের দিন মারা যান অন্তত ৩৫ জন; বাকিরা ভোটের আগে-পরের সহিংসতায়। শনিবার ভোটের সময় মারা গেছে আরও তিনজন।
স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনে এবার সহিংসতা বেড়েছে; রেকর্ড হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যায়।
এর আগে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এবং সহিংসতায় ৮০ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করে সিইসি বলেন, “প্রাণহানি দুঃখজনক, এ জন্যে আমরা মর্মাহত। কমিশন এ বিষয়ে গভীর শোক প্রকাশ করছে।”
কাজী রকিব জানান, শনিবারের শেষ ধাপের ভোটে অনিয়মের কারণে ৩৬টি ভোট কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। এসময় তিন জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিধি লঙ্ঘনে অন্তত ৫০০ জনকে ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বেশি অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “নির্বাচনে কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি অনিয়ম ও সংঘাত ছাড়া সারা দেশের সব ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।”
ভোট কেন্দ্র করে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির দায় কার- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “এটার জন্যে সামাজিকভাবে সংস্কার দরকার। যে কোনো মূল্যে জেতার মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।”
শেষ ধাপে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৬৯৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এতে ভোটার ছিল ১ কোটি ১০ লাখের বেশি। ভোটকেন্দ্র ছয় হাজার ২৮৭টি।
চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগের পাঁচ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২২৬৭ ইউপিতে ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩১০ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন।
ইসির হিসাবে প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. শাহনেওয়াজ ও ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।