আজকের দিন তারিখ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় সালথায় তাণ্ডব : দায়ীদের কোনোভাবেই ছাড় নয়

সালথায় তাণ্ডব : দায়ীদের কোনোভাবেই ছাড় নয়


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৮, ২০২১ , ১২:০৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


দেশের এমন চরম সংকটকালে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে গুজব ছড়ানোর কাজে। অতীতে আমরা দেখেছি, গুজব ছড়িয়ে দেশে ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। ফরিদপুরের সালথায় এক আলেমসহ ২ জনকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে সোমবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও থানায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী উগ্রবাদীচক্র। মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলাকারীরা সাড়ে ৪ ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তাদের এ হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন উগ্রতার ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া এবং টেকনাফে ফেসবুকে গুজবের জের ধরে ১৩টি বৌদ্ধ মন্দিরে এবং তাদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্ম অবমাননার গুজবে হিন্দুদের মন্দিরে এবং বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। পরের বছরই ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সহিংসতা হয়েছিল। নিকট-অতীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও এমন অপকর্ম চালিয়েছিল কেউ কেউ। গুজব ও ভুয়া খবরে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। এখন বিজ্ঞানের যুগ। এই আধুনিক সমাজব্যবস্থায় যারা এ ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় এনে গুজব ছড়ানোর মূল উদ্দেশ্যগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে গুজব ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হিসেবে অনেকে ব্যবহার করছে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে কীভাবে গুজব ছড়ানোর প্রবৃত্তি থেকে তাকে মুক্ত করা যায় এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। আমাদের দেশেও সেটি হতে পারে। এ ধরনের গবেষণায় কোনো কোনো মনস্তাত্ত্বিক উপাদান মানুষকে গুজবে আকৃষ্ট হতে ও গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে, সে উপাদানগুলো চিহ্নিত করে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। গুজব প্রতিরোধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জনগণের মাঝে গুজব সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বড় ভূমিকা রাখতে পারে দেশের মূল স্রোতধারার গণমাধ্যমগুলো। যে কোনো ভুল তথ্যের সন্ধান পেলে প্রকৃত তথ্য দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে তারাই সবার আগে গুজব মোকাবিলায় জরুরি ভূমিকা রাখতে পারে। সালথার ঘটনা চিহ্নিত মৌলবাদী গোষ্ঠী জড়িত বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। এরা সংগঠিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা আমরা দেখছি। সামনে হয়তো আরো বড় কোনো হুমকি আসবে। বর্তমান সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা ধরনের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় চাপ উপেক্ষা করে প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। এজন্য তিনি নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে তিনি সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা মনে করি, আজ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যখন হুমকির মুখে তখন সপক্ষের সব সংগঠন রাজনৈতিক ছাত্র যুব মুক্তিযোদ্ধা নারী পেশাজীবীসহ সব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।