সিংগাইরে বৃষ্টিতে নির্ঘুম রাত কাটে ৬০ পরিবারের
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : উপজেলার জামশা ইউনিয়নের কালীগঙ্গা নদীর তীরে গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে ৬০টি পরিবার। সংস্কারের অভাবে এ ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে বৃষ্টির দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় বাসিন্দাদের।
জানা যায়, ২০০৩ সালে তৎকালীন সরকার কালীগঙ্গা নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে দুস্থ ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে। যেখানে ভূমিহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও অসহায় পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। কিন্তু বর্তমানে এ ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাকা মেঝে ভেঙে গেছে। টিনের চালা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। লোহার অন্য সরঞ্জামেও মরিচা ধরেছে। একটু বৃষ্টি হলেই চুইয়ে পানি পড়ে। ঘরের বেড়া ও দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ভাঙাচোরা ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে কোনো রকম বসবাস করে আসছে বাসিন্দারা। রাতে বৃষ্টি হলে মাথায় পলিথিন দিয়ে ভাঙা ঘরের কোনে বসে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। গোসলখানা, টয়লেট ও টিউবওয়েলগুলো ভেঙে গেছে। নেই চিকিৎসা ও বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা। অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ও অস্বাস্থ্যকর এ ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করছে এসব পরিবার। অভাব এদের নিত্যসঙ্গী।
এখানকার বাসিন্দা কাজী জাহাঙ্গীর ও তার অন্ধ স্ত্রী আছমা বলেন, ‘সুইপারের কাজ করি। কোনো কাজ নেই। এরপর বৃষ্টিতে ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। পলিথিন টানিয়ে রাতযাপন করতে হয়, ঘুম আসে না।’ বিধবা রিজিয়া জানান, এক সময় তিনি অন্যের বাড়ি কাজ করতেন। বয়স হওয়ায় এখন আর মেলে না কাজ। মানুষের সহায়তাই এখন জীবিকার মাধ্যম। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। অগত্যা ভাঙা ঘরেই বাধ্য হয়ে মাথা গুঁজতে হয় । দীর্ঘদিন তিনি বিধবা। অথচ বিধবা কার্ড তার ভাগ্যে জোটেনি। ইয়াসমিন আক্তার নামে এক গৃহিণী জানান, ‘চকে কাজ করি। কেউ সাহায্য করে না। চেয়ারম্যান মেম্বার আসে শুধু ভোটের সময়। তখন পায়ে পর্যন্ত ধরে মাথায় হাত বুলায়। রাতে বৃষ্টি এলে বসে থাকতে হয় পলিথিন বিছিয়ে। কেউ খোঁজ নেয় না।’
খাদিজা জানান, তার স্বামী গাড়ি চালায়। অনেকেই ভাঙা ঘরের ছবি নিয়ে যায়। পরে আর আসে না।’ ৭০ বছরের বিধবা মিশ্রণ বিবি জানান, তার ঘরখানা বসবাসের উপযোগী নয়। তার পরও অন্য উপায় না থাকায় এখানে থাকতে হয়। অন্ধ রোকেয়া বলেন, তার স্বামী পাগল। ভিক্ষা করে চলতে হয়। যাদের কিছুটা সামর্থ্য আছে তারা চলে গেছে। জায়গা নেই যে গরু-ছাগল পালন করবেন। বৃদ্ধ পুষ্প রানী জানান, ‘বাড়ি বাড়ি কাজ করি। শুধু ঈদের সময় চাল পাইছি। কষ্টে আছি, যা বোঝাতে পারব না।’
জামশা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিঠু জানান,‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে ইউএনও এবং পিআইওকে অবগত করেছি। তারা এসে দেখেও গেছেন। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।’