আজকের দিন তারিখ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় সুন্দরবন সম্প্রসারণ উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর হোক

সুন্দরবন সম্প্রসারণ উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর হোক


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৮, ২০২১ , ২:০৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য খুবই ভালো সংবাদ যে, জীববৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবন সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংসদে এ তথ্য জানান। এ বনের আয়তন বাড়াতে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বৃক্ষাদি এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য তথা বন অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংসহ নানাবিধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবন। সংরক্ষিত এই বনের ৩টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেসকো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ শতাংশ এলাকা। বাংলাদেশের ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবন অক্সিজেনের এক বিশাল ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। এর অর্থনীতিক গুরুত্বও অনেক। সুন্দরবন থাকার কারণে আমরা সৌভাগ্যবান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সুন্দরবনকে আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। কখনো উন্নয়নের নামে, আবার কখনো ব্যক্তি বা মুষ্টিমেয় দলগত স্বার্থের কারণে। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবও মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনে গাছপালা ও প্রাণিকুল হুমকির মুখে। অজ্ঞতা ও অবহেলা এবং সুন্দরবনের ভেতরের নদীগুলোর লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে অনেক গাছপালা ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। বারবার আগুন লেগে বনের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এই আগুনের তীব্র তাপ পুড়ে যাওয়া এলাকার বাইরেরও বিস্তৃত এলাকায় পরিবেশের ক্ষতি করে, বিপন্ন করে প্রাণিকুলকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কিন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগগুলো থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মনুষ্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। বনের অভ্যন্তরের নদ-নদীতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্য নিয়ে জাহাজ বা কার্গো চলাচল করছে। জাহাজডুবির ঘটনা ঘটলে যে দ্রুত উদ্ধার করা হবে বা নদীর পানি থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হবে সেটিও দেখা যায় না। তবে সুন্দরবন রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি দ্বীপ সাগরে হারিয়ে গেছে সুন্দরবনের মানচিত্র থেকে। ১৯৬৯ থেকে ২০০১ সাল অবধি সময়কালে এখানে আমরা হারিয়েছি ১৫০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল, যদিও কিছুটা আমরা ফিরেও পেয়েছি, তবে তা মনুষ্য বসবাসের যোগ্য এখনো হয়নি। আমাজনের মতো বনও আজ মানুষের লোভের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সেই বনও সংকুচিত হচ্ছে। পৃথিবীর ফুসফুসের যদি এই অবস্থা হয়; তাহলে বাংলাদেশের ফুসফুসের কী হবে? তাই আগেভাগেই সাবধান হতে হবে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পিত বনায়নের পাশাপাশি বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি প্রাণী ও ভেষজের আধার সুন্দরবন। সবাই মিলেই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। সরকার সুন্দরবনের পরিধি বাড়ানোর যে উদ্যোগের কথা বলছে আমরা চাই তা দ্রুত কার্যকর হবে।