আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// স্বল্প আয়ের মানুষের চোখ ওএমএসের ট্রাকে

স্বল্প আয়ের মানুষের চোখ ওএমএসের ট্রাকে


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ৩:৫২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


সানি আজাদ : সবুজ মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রির সহকারী। প্রতিদিন তার কাজের ডাক আসে না। মাসে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা আয়। সকাল ৮টা থেকে মিরপুর কালশীর ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল বা খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি) ট্রাক সেল পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে এখনও চাল আর আটা নিতে পারেননি। তিনি বলেন, যতই কষ্ট হোক এখান থেকে কিনতে না পারলে পরে বাজারের টাকায় কুলাইবো না। ট্রাকই আমাগো ভরসা। শুধু সাইফুল ইসলামের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ নয় ওএমএস-এর এই ট্রাক সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্যম আয়ের নাগরিক জাহাঙ্গীর আলম। পেশায় তিনি ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। মাসিক আয় ২৭ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া, দুই বাচ্চার স্কুল খরচ, গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠানো, এক বছর বয়সী শিশু সন্তানের খরচ শেষে বাজার করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না। সেই সঙ্গে আছে নিজের দৈনিক খরচ। সব মিলিয়ে এই বেতনে মাসিক হিসাব মেলাতে হিমসিম খাচ্ছেন। কাজের মধ্যেই দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেক অনুরোধ করে আগে আগে চাল আর আটা নিয়ে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সব সময় ট্রাক থেকে নেওয়ার সুযোগ হয় না। আজকে স্যার মিরপুরে আসছে, সামনে ট্রাক দেখে নিয়ে নিলাম। আয়ের সঙ্গে সব জিনিসের ব্যয়ও বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এইখানে যারা আসছে তাদের থেকে বলা যায় আমার আয় বেশি। কিন্তু আমার খরচও বেশি। শুধু যে খাওয়ার খরচ বাড়ছে তা নয়। থাকা, চলাফেরা, ছেলেপেলের লেখাপড়া সব কিছুরই তো খরচ বাড়ছে। এত কিছু ব্যালেন্স করে দিন শেষে কোনও না কোনও হিসাবে টান পড়ে।

সেদিক দিয়া বাজার যদি একটু সাশ্রয়ে পাওয়া যায় তাহলে উপকার হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সাইফুল বা জাহাঙ্গীরের মতো স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য এখন ভরসা ওএমএস-এর ট্রাক সেল। তবে তা নিতে অনেক ক্ষেত্রে পোহাতে হয় ভোগান্তি। তবু পণ্য বুঝে পেলে সপ্তাহ খানেকের জন্য চাল-আটা কেনার চিন্তা থেকে স্বস্তি মেলে। গতকাল এমন চিত্রের দেখা মিলেছে মিরপুরের বিভিন্ন ওএমএস-এর ট্রাক সেল পয়েন্টে। দেখা যায় ওএমএস-এর ট্রাকে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায় এবং খোলা আটা ২৪ টাকা। যা সাধারণ বাজারে যথাক্রমে চাল ৫৫ টাকা ও আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রত্যেক ক্রেতা পাচ্ছেন ৫ কেজি করে। ফলে ভোগান্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রায় চারশো টাকা কমে পণ্য কিনতে পাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। কম দামে ওএমএস-এর ট্রাক সেলে পণ্য মিললেও তা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় ক্রেতাদের। ভোর রাত থেকে ট্রাকের জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা। তবে ট্রাক আসার পরপরই শুরু হয়ে যায় বিশৃঙ্খলা। পণ্য বিতরণে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে অধিকাংশ ট্রাক সেল পয়েন্টের আশপাশে দেখা যায়নি দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শককে। ফলে পরে এসে পণ্য নিতে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায় অনেক ক্রেতাকে।

প্রায় ক্ষেত্রে সেই ধাক্কাধাক্কি গড়ায় হাতাহাতিতে। এ বিষয়ে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করতে থাকা ডিলাররা কোনও দায় নিতে চান না। তারা জানান, ডিলারদের কাজ সঠিক ওজনে ও দামে পণ্য বিক্রি করা। শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখবে দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শক। শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খাদ্য পরিদর্শক বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে ধৈর্যবোধ কম। তারা বিশৃঙ্খলা করে। তাই আমি সকালে ফজরের নামাজ পড়ে এসে সবার হাতে নাম্বার লিখে দেই দুই দিনে দুই রঙে। আমার এখানে এই ধরনের সমস্যা হয় না। তিনি বলেন, অনেক ক্রেতাই এখান থেকে পণ্য নিয়ে বাহিরে বিক্রি করে এমনও অভিযোগ পেয়েছি। চিহ্নিত করতে পারলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।