আজকের দিন তারিখ ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্ম ও জীবন স্বস্তি ফিরিয়ে আনে তাওবা

স্বস্তি ফিরিয়ে আনে তাওবা


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১২, ২০২২ , ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: ধর্ম ও জীবন


ইসলাম ডেস্ক : জীবনচলার পথে নানা রকমের স্খলন হয়েই যায়। কখনো চেতনে কখনোবা অবচেতনে। তবে সত্যিকার মানুষ কখনো ভুল-ত্রুটিতে অটল ও অবিচল থাকতে পারে না। বিবেকবোধ, দায়বদ্ধতা ও পরকালের ভয় তাকে সবসময় অনুশোচনায় রাখে। ভেতরে ভেতরে অস্থির করে তোলে। তাই অপরাধ মোচনে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে। মানবজীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ও স্খলন হলো, আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা ও রাসুল (সা.) এর সুন্নাতের বিমুখতা। আর এরই নাম গুনাহ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই যারা গুনাহ করে, অচিরেই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের বদলা দেয়া হবে। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)

গুনাহের কারণে দুনিয়া-আখেরাতে প্রত্যেককেই শাস্তি পেতে হবে। তবে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘আর আমি অবশ্যই ক্ষমাকারী তার জন্য, যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। ’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ৮২)

গুনাহগার বান্দা যখন তাওবা করে তখন আল্লাহ তাআলা অত্যধিক খুশি হন। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭০৯)
মূলত তাওবা হলো অতীতের অপরাধ ও ভুলের কারণে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া। আল্লাহর দরবারে ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন ভুল প্রকাশিত না হওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করা। সেই সঙ্গে কারো হক-পাওনা বিনষ্ট করে থাকলে, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। তবে প্রকাশ্য গুনাহের জন্য অবশ্যই প্রকাশ্যে তাওবা করতে হবে।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.) বলেন, তাওবা হলো ছয়টি বিষয়ের সমষ্টি। ১. নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ২. ছুটে যাওয়া ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতগুলো আদায় করা। ৩. অন্যের সম্পত্তি- অধিকার নষ্ট করে থাকলে, তা ফেরত দেয়া। ৪. শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে, ক্ষমা চাওয়া। ৫. ভবিষ্যতে পাপকাজ পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্প করা। ৬. আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা।

আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের তাওবার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো, খাঁটি তাওবা। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ০৮)
আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন, তাওবাকারী তাদের অন্যতম। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)
মানুষমাত্রই পরিচ্ছন্ন ও সুখী জীবনের প্রত্যাশী। ঝামেলাহীন সম্মান-মর্যাদায় বেঁচে থাকতে চায় প্রতিটি ব্যক্তি। কিন্তু এ প্রত্যাশা পূরণে সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের গুনাহ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয়ই তার জীবন হবে সংকুচিত। ’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১২৪)
কোরআনের ভাষ্যে ওই সমস্ত লোকের জন্য সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর কোরআন ও তার রাসুলের প্রদর্শিত পথে চলতে বিমুখ হয়। আর এরই নাম গুনাহ। আল্লাহ আমাদের নির্দেশ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, তওবা করো, যেনো তোমরা সফলকাম হতে পারো, সার্থক হতে পারো। ’ (সুরা আল-নুর, আয়াত : ৩১)
জানা-অজানা গুনাহই মানুষের জীবনে অশান্তি ও সংকীর্ণতা নিয়ে আসে। আর তাওবা সব ধরনের গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়।
রাসুল (সা.) সে কথাই বলেছেন, ‘যে গুনাহ ছেড়ে তাওবা করলো, সে গুনাহহীন মানুষের মতোই। ’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস নং : ৪২৫০)
প্রকৃত তাওবা মানুষকে নিষ্পাপ করে দেয়। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, মানুষ যদি পাপ না করতো তবে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে উঠিয়ে নিয়ে এমন এক সম্প্রদায়ের অবতারণা করতেন, যারা পাপ করত এবং পরে (নিজের ভুল বুঝতে পেরে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৬৭১০)
এ পার্থিব জগতে নানান ঝক্কি ঝামেলা নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। বিভিন্ন কৌশলে এবং রকমারি চিন্তাভাবনায় নিজের জীবন, পরিবার, সমাজ ও সবকিছুতে শান্তি-স্থিতিশীলতা, স্বস্তি-সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই তা হচ্ছে না। বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসঙ্গতি। সত্যি বলতে; আমরা হাঁটছি উল্টো পথে।

আমরা যদি ব্যক্তি জীবনে পরিশুদ্ধ ও গুনাহমুক্ত হওয়ার সাহস করতে পারতাম, তাহলে সবকিছুই স্বচ্ছ ও সুন্দর হয়ে যেতো। কিন্তু আমাদের সবকিছু ভয়াবহ রকমের অস্বচ্ছ ও অসুন্দর। আর এর পেছনে প্রথম ও প্রধান কারণ হলো গুনাহ।

মানুষ যেন নিজের পাপের প্রতি উদাসীন না হয়ে যায়। রাসুল (সা.) সেদিকে সতর্ক করে বলেন, ‘একজন ঈমানদার ব্যক্তির নিকট তার পাপ হলো একটি পাহাড়ের মতো, যার নিচে সে বসে রয়েছে এবং সে আশঙ্কা করে যে, সেটি তার উপর পতিত হতে পারে। অন্যদিকে একজন দুষ্ট মানুষ তার পাপকে উড়ন্ত মাছির মতো মনে করে এবং সেটা অবজ্ঞা করে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৩০৮)

হাদিসে রাসুল (সা.) মানুষকে ক্ষমা চাওয়ার ও তাওবা করার তাগিদ দিয়েছেন। মানুষ যত বড় ভুলই করুক, তাওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। কেননা আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কাউকে নিরাশ হতে বারণ করে তিনি ইরশাদ করেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ—আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা যুমার, আয়াত : ৫৩)
আমরা যদি যথার্থ তাওবা করতে পারি, নিজেদের পাপ ছেড়ে সত্য ও সুন্দরের পথে হাঁটতে পারি—তাহলেই কেবল সম্ভব পার্থিব জীবনে অপার্থিব সুখ লাভ। অধিকহারে তাওবা এবং গুনাহমুক্ত জীবনই হোক আমাদের ব্রত। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।