আজকের দিন তারিখ ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// মুহূর্তের মধ্যেই সব ঘটে গেছে। বিকট শব্দ, অন্ধকার, ধোঁয়া আর ধুলোবালি

মুহূর্তের মধ্যেই সব ঘটে গেছে। বিকট শব্দ, অন্ধকার, ধোঁয়া আর ধুলোবালি


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৮, ২০২১ , ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক :  রাস্তায়  দাঁড়িয়ে আছে দুটি বাস। জানালা এবং সামনে-পেছনে কোনও কাঁচ আস্ত নেই। সব ভেঙ্গে চুরমার। বাসের লোহার বডিও বেঁকে গেছে কোথাও কোথাও। ভবনের সামনের ইট-সুরকি পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ভবনের কয়েকট কলামও আধভাঙ্গা হয়ে আছে। সামনে পড়ে আছে বিশালাকার এক জেনারেটর। ধ্বসে পড়েছে সিঁড়ি ও নিচতলার ছাদের অংশবিশেষ। সামনের সড়ক পেরিয়ে আড়ং ছয় তলা ভবনের কাঁচগুলোও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে। এমনকি পাশের বিশাল সেন্টারের একাংশ, পাশের মগাবাজার প্লাজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথম দেখাতেই মনে হবে যুদ্ধবিদ্ধস্ত কোনও ধ্বংসস্তুপ। রাজধানীর মগবাজারের রাখী নীড় নামে তিন তলা ভবনটি বিস্ফোরণের পর সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হঠাৎ করেই বিকট শব্দে এই ভবনের কোনও অংশ থেকে বিস্ফোরিত হয়েছে, বিস্ফোরণের মাত্রা ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের প্রায় তিনশ’ স্কয়ার ফিট এলাকা। আহত হয়েছেন ভবনের ভেতরে থাকা লোকজন, রাস্তায় চলতে থাকা বাসযাত্রী, রিকশাযাত্রী ও পথচারী মিলিয়ে শতাধিক; যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন সাত জন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম অবশ্য নাশকতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি বিস্ফোরক কোনও উপাদান পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নাশকতা না। নাশকতা মানে বিস্ফোরক বা বোমার বিস্ফোরণ হতো। ঘটনাস্থলে এবং আশেপাশে স্প্লিন্টার পাওয়া যেত। মানুষের শরীরেও পাওয়া যেত। গ্যাস বা এজাতীয় কিছু বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি শর্মা হাউজের গ্যাস বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। মগবাজারের এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর পুলিশের পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ। খবর পেয়ে ছুটে যান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সদস্যরা ধ্বংসস্তুপ থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি গ্যাস বা গ্যাস জাতীয় কোনও কিছু থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্ফোরণের কারণ বলা যাবে।’ একই কথা বলেছেন সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে গ্যাস জাতীয় কিছুর বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এসি, জেনারেটর বা গ্যাস লাইন থেকেক বিস্ফোরণ হতে পারে। ক্রাইম সিনের সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ক্লিয়ার করে বলা যাবে।’

সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে, প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন তলা রাখী নীড় নামে এই ভবনের নিচতলার পূর্ব দিকে গ্রান্ড সুইটস অ্যান্ড বেকারী, মাঝখানে একটি শর্মা হাউজ ও পশ্চিম দিকে বেঙ্গল মিট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল। তিনটি প্রতিষ্ঠানই নিচতলার পুরোটা জুড়ে নিজেদের কার্যক্রম চালাতেন। দোতালায় ছিল সিঙ্গারের একটি গুদাম। প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস, সিআইডির ক্রাইম সিন ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বলছেন, বেঙ্গল মিট বা শর্মা হাউজের যে কোনও একটি থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, বেঙ্গল মিটে একটি বড় চিলার রুম (খাদ্যপণ্য ঠান্ডা রাখার কক্ষ) রয়েছে। সেই চিলার রুমের তাপমাত্রা অনেক কম রাখা হয়। সেটির জন্য হাইভোল্টেজ কমপ্রেশার ব্যবহার করা হয়। কোনও কারণে এই কমপ্রেশার বিস্ফোরিত হতে পারে। এছাড়া শর্মা হাউজের নিজেদের ব্যবহারের জন্য যেসব সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও বিস্ফোরিত হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা ভবনের সামনে বড় আকাড়ের একটি জেনারেটর পড়ে থাকার বিষয়টি দেখিয়ে বলেন, জেনারেটর বিস্ফোরণ হয়নি। কারণ ঘটনার সময় এই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল। ফলে জেনারেটর ব্যবহার হচ্ছিল না। আর জেনারেটর ব্যবহার না হলে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। ঘটনার পরপরই ছুটে যাওয়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, অনেকেই প্রথমে একটি মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা বলেছেন। কিন্তু সেটি সত্য নয়। গ্যাস জাতীয় কিছু বিস্ফোরণের কারণেই এর মাত্রাটা বেশি হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শর্মা হাউজে দুটি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছেন। তবে তারা সরাসরি গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা সেখানে যে গ্যাসের লাইন পেয়েছি সেটি খুবই ছোট। ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ডায়ামিটারের পাইপ লাইন। যেটির চাপ মাত্র ২ পিএসআই। এতে খুব বেশি গ্যাস থাকার কথা নয়।

বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বর্ণনার বিষয়ে সবারই একই বক্তব্য পাওয়া গেছে। সবাই বলছেন, মুহূর্তের মধ্যেই সব ঘটে গেছে। বিকট শব্দ, অন্ধকার, ধোঁয়া আর ধুলোবালি আর অসংখ্য কাঁচের টুকরো ছিটে এসেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, মারা যাওয়া নারী ও শিশুসহ অন্যরা শর্মা হাউজে কিংবা এর সামনে ছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। একারণে শর্মা হাউজই বিস্ফোরণের কেন্দ্র বলে তারা ধারণা করছেন।