আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট: প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট: প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৫, ২০২১ , ১:০১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বৃহৎ বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রস্তাবিত এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। করোনাকালে প্রত্যাশা ছিল- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। অর্থমন্ত্রী মুখে এসব খাতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়ার কথা বললেও নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ বাড়েনি। বাজেট ঘাটতির টাকা নিয়ে সিপিডি শঙ্কা প্রকাশ করেছে। সিপিডির মতে, বাজেট ঘাটতি কোথা থেকে আসবে সেটা বড় প্রশ্ন। বৈদেশিক উৎস থেকে বাজেট ঘাটতি পূরণের বিষয়টি ইতিবাচক দিক, এটা আকাক্সিক্ষত। তবে গত অর্থবছরের ১০ মাসের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে পুরো অর্থবছর কেমন হতে যাচ্ছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি ঠিক করা হয়নি। সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জরুরি মনে করছি। বৃহৎ বাজেট আমাদের অর্থনীতির কলেবর বৃদ্ধি, জাতীয় ব্যয় বৃদ্ধিরই প্রতিফলন। বাজেটে নির্ধারিত ব্যয়ের অঙ্ক যত বড় হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন ততই বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২০-২১ অর্থবছরটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ও বর্তমান সরকারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তাদের ঘোষিত উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়নের একটা বিশেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ অর্থবছরে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে বা শুরু করতে হবে বা শুরু করা কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলোতে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২৬টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। সেতু বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতু বিভাগের বরাদ্দের বড় অংশই যাবে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে। রেলে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ প্রকল্পে যাবে উন্নয়ন বরাদ্দের বড় অংশ। এছাড়া নৌপরিবহন খাতে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, বিমান পরিবহনে ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং টেলিযোগাযোগে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ পাচ্ছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, যা এই অর্থবছরে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সর্বোচ্চ। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে আমাদের দুটি খাতে অর্জন ছিল। একটি অর্থনৈতিক, অন্যটি শিক্ষা। কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাবে এ দুটি খাতই বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। বাজেটে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে। বাজেটে শিক্ষাসহ মানবসম্পদ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দের হার সন্তোষজনক পর্যায়ের নয়। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৯৪ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। যা মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। করোনার কারণে দেশের ব্যবসা স্থবির। অর্থনীতির চাকা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে কর রাজস্ব আয় কমছে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ায় আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয়ও কমার পূর্বাভাস দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বড় এ বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ১২৩ কোটি টাকা কোটি টাকা, যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশালাকার এই বাজেটকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী বাজেট। তবে বাজেট উচ্চাভিলাষী কি না সেটা নির্ভর করে বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর। বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না যদি এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকে। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রুতি পূরণের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।