৯ জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে নয় জনের মৃত্যু : ২০ বাড়ি লকডাউন
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৪, ২০২০ , ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
দিনের শেষে ডেস্ক : দেশের নয় জেলায় করোনা উপসর্গে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে কলেজছাত্র, বরগুনার তালতলী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বন্দরে তিন বৃদ্ধ, মাগুরার মহম্মদপুরে আইসোলেশনে থাকা রোগী, পিরোজপুরের নাজিরপুরে গৃহবধূ, বরিশালের গৌরনদীতে রিকশাচালক, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে তরুণী ও মেহেরপুরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লকডাউনে ২০ বাড়ি এবং হোম কোয়ারেন্টিনে ১৮ জন রয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাতক্ষীরা : সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন এক কলেজছাত্র। তার বাড়িসহ ৫ বাড়ির ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী জানান, লাশ দাফনের পর মারা যাওয়া কলেজছাত্রের বাড়িসহ ৫ বাড়িকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ঝাউডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মারা যান। দাফনের আগে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানোর জন্য তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তালতলী (বরগুনা) : তালতলীতে করোনা উপসর্গে ৫-৬ দিন অসুস্থ থাকার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। জানা গেছে, উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের ওই বৃদ্ধ গত ৫-৬ দিন জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলেন। করোনা আতঙ্কে ওই বৃদ্ধকে কোনো হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়নি। তাকে পল্লীচিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছিল।
বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) : বন্দরের রসুলবাগে করোনায় এক নারীর মৃত্যুর পর পার্শ্ববর্তী কদমরসুল পূর্বপাড়ায় শুক্রবার জ্বর-সর্দিতে এক বৃদ্ধের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। ফলে করোনাভাইরাস আতঙ্কে জনশূন্য হয়ে পড়েছে মহল্লা। বৃদ্ধের লাশ নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে তার পরিবার। পরে ইউএনওর অনুমতি নিয়ে স্বল্পসংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধের ছেলে জানান, তার বাবা ডায়বেটিসে ভুগছিলেন। ৫-৬ দিন আগে তিনি জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হন। শুক্রবার সকালে তার অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে মুহূর্তের মধ্যে মহল্লা শূন্য হয়ে যায়। আশপাশের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় লাশ দাফন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। পরে ইউএনও শুক্লা সরকারের হস্তক্ষেপে ওই বৃদ্ধের লাশ দাফন করা হয়।
মহম্মদপুর (মাগুরা) : মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভর্তির পর তাকে হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাতপাতালে পাঠালে শুক্রবার সকালে সে মারা যায়। তার বাড়ি উপজেলার কমলধরি গ্রামে।
নাজিরপুর (পিরোজপুর) : নাজিরপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে এক গৃহবধূর (২৫) মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে তিনি মারা যান। ওইদিন রাতে উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর বরইবুনিয়া গ্রামে ওই গৃহবধূর বাবার বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্র জানায়, দু’সপ্তাহ আগে ওই গৃহবধূ ঢাকা থেকে এসেছেন। শনিবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। ওই অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু বলে পরিবারের দাবি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারী জানান, এ রোগী সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। যে কারণে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।
গৌরনদী (বরিশাল) : গৌরনদীতে সর্দি জ্বর, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক রিকশাচালক (৪৫) মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের উত্তর বিল্বগ্রামে নিজ বাড়িতে ওই রিকশাচালক মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি মেডিকেল টিম মৃত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে। ওই এলাকার সালেবাগ ও কাগজিপাড়ার ৬০টি পরিবারের লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান পিকলুর অর্থায়নে ওই পরিবারগুলোর ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, ওই গ্রামের মৃত রিকশাচালক দীর্ঘদিন যাবৎ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এক সপ্তাহ আগে ওই রিকশাচালক সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হন। তিনি চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ওষুধ খাওয়ার পরেও সুস্থ হয়ে ওঠেননি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে তার শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। ওইদিন রাতে রিকশাচালকটি নিজ বাড়িতে মারা যান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা ধারণা করছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়্যিদ আমরুল্লাহ জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি মেডিকেল টিম মৃত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় পাঠিয়েছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : গাজীপুরে তৈরি পোশাক কারখানার এক শ্রমিকের লাশ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। উপজেলার মাহতাবপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চায়েতি কবরস্থানে তার লাশ দাফনের পর বসতবাড়িসহ আশপাশে থাকা সাত বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ওই পোশাক শ্রমিক সর্দি জ্বর কাশিতে ভুগে গাজীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার রাতে ওখানকার হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বালুচর গ্রামের তার দুই স্বজন গাজীপুর থেকে তার লাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, ঢাকায় আইইডিসিআরে যোগাযোগের পর লাশের সাথে আসা দু’স্বজনসহ পরিবারের সব সদস্যকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : সীতাকুণ্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে এক তরুণীর মৃত্যুর একদিন পর একই পরিবারে থাকা তার ভাবিও একই লক্ষণ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিআইটিআইডি’র কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হন। পরে তারা ওই তরুণীর ভাবির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।বৃহস্পতিবার বিকালে এ নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেলেও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ। যদি করোনা পজেটিভ আসে তাহলে ওই এলাকা লকডাউন করা হবে। ওই পরিবারের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওই তরুণী (২৮) গত কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন। বুধবার ওই তরুণীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া : সদর উপজেলায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। করোনার উপসর্গ নিয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এদিকে মৃত্যুর পর তার শ্বশুরবাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান জানান, আমরা ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তার শ্বশুরবাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে লকডাউন ঘোষণা করেছি। আশপাশের বাড়িগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
শরীয়তপুর : ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুরে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথা নিয়ে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তিনি ৭ দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। সখীপুর থানাধীন চরভাগা ইউনিয়নের কাজি কান্দি গ্রামের ওই বৃদ্ধ শুক্রবার নিজ বাড়িতে মারা যান। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর মহাখালীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।