আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// বাড়ছে বন্যার পানি, আতঙ্কে মানুষ

বাড়ছে বন্যার পানি, আতঙ্কে মানুষ


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৫, ২০২৩ , ৪:৫৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


সানি আজাদ : মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে উজানে ভারী বর্ষণের ফলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও। এদিকে, দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরের চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল। ফলে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৬১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা: ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার)। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, উজানে ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। পানি আরও ৩/৪ দিন বাড়বে। এতে সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনাও রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যেই ৬৫০ মেট্রিক টন চাউল ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে শাহজাদপুর উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকায় ১০ মেট্রিক টন চাউল বিতরণ করা হয়েছে। আমরা তালিকা করছি। তালিকা অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বিপৎসীমা ওপরে আছে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি। এতে জেলার ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি ৩০ হাজার মানুষ। প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি তলিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষজন। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় নিচু স্থানের ঘরবাড়িগুলো পানিতে নিমজ্জিত। বানভাসিরা আসবাবপত্র, গবাদিপশু পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানগুলোতে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছে বানভাসি মানুষ। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভোর ৬টার তথ্য অনুযায়ী, জেলার ধরলা নদীর পানি কমে সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেমি, দুধকুমার নদের নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কাউনিয়া পয়েন্ট তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন কদমতলা গ্রামের হোসেন আলী বলেন, পানি বাড়ায় এলাকার অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ধানের বীজতলা, পটলের ক্ষেত এখন পানির নিচে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। চর জগমন গ্রামের মো. হযরত আলী বলেন, পানি ঘরে ঢুকে খাট তলিয়ে গেছে। রান্নার চুলা পানির নিচে। ঘরে চাল থাকলেও আগুন জ্বালানোর কোনো উপায় নাই। এখন শুকনো খাবার প্রয়োজন। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ারও সুযোগ নেই। চর জগমন গ্রামের ছালেহা বেগম বলেন, কিছুদিন আগে পানি ওঠার অল্প সময়ের মধ্যে নেমেও যায়। কিন্তু এবার পানি বাড়ার ধরন আলাদা। পানিতে ঘর অর্ধেক ডুবে গেছে। দুদিন ধরে ঘরের জিনিসপত্র, হাঁস-মুরগি নিয়ে তাবু টাঙিয়ে ব্রিজে আছি। আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিন-চারদিন পানি ওঠানামা করতে পারে। এরপর পানি নেমে যাবে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, এরই মধ্যে ৬৫ টন চাল জেলার ৯ টি উপজেলায় উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ৫৮৫ টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ১৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত আছে। আমরা বন্যার্তদের তালিকা করছি, তালিকা পেলে উপ-বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে, পাহাড়ি ঢলে বেড়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে। গতকাল সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড হয়েছে ৫২ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পানি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস আছে। এর আগে ১২ জুলাই থেকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়েছিল। যা সাম্প্রতিক সময়ের সব থেকে বেশি পানি উচ্চতা। ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জ, ঝারসিংহেসর, খগারচর, জুয়ার চর, বাংলাপাড়া, উত্তর খড়িবাড়ী, বাইশপুকুর ও জলঢাকা উপজেলার ফরেস্টের চর, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়িসহ বেশ কয়েকটি চর প্লাবিত হয়। ফলে নদীগর্ভে থাকা শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। গবাদি পশুসহ ঘরবাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়ে এসব মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পরিবারগুলো। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক করছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে পানি কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে তিস্তাপাড়ে। জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি চরের বাসিন্দা রুমি আক্তার বলেন, পানি কদিন থেকে হাঁটু সমান হয়েছিল। গরু-ছাগল নিয়ে যন্ত্রণার শেষ নাই। রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। ডিমলা টেপাখড়িবাড়ি নদী গর্ভের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, পানি বাড়লেই আমরা আশ্রয়হীন হয়ে যাই। কী করার দুঃখের কপাল। কদিন একেবারে নিশ্বাস বন্ধ হওয়া অবস্থা। আজ তো পানি কমছে। আল্লাহ যেন আর না বাড়ায়। দুদিন থেকে রান্না হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য সফিয়ার রহমান বলেন, পানি তো কমছে। কিন্তু কমলেই ভাঙন দেখা দেবে। এতে সব থেকে বড় ক্ষতিটা হবে অনেক জমি নদীতে চলে যাবে। উপজেলা থেকে তালিকা করতে বলছে সেই কাজই করছি। এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, বরাদ্দ এখনো হাতে পাইনি। আমাদের তালিকা করতে বলেছে, সে তালিকা আমরা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে বিতরণ করা হবে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০ টন ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে। আমরা জেলায় আরও ত্রাণের জন্য আবেদন করেছি। হয়তো ৫০ টন চাল পেতে পারি। পেলে সেটিও বরাদ্দ দেওয়া হবে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদীন বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে। সারাদিন কমলেও রাতে একটু বাড়তে পারে। কিন্তু তা আবারও কমে যাবে।