ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্ক ‘নতুন দিগন্তের সূচনা’
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৬, ২০১৬ , ৩:২৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
এম ওয়াই আলাউদ্দিন, সৌদিআরব থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদিআরব সফরের মাধ্যমে ঢাকা রিয়াদ সম্পর্ক ‘নতুন দিগন্তের সূচনা’ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে সম্পর্কের যে শুভসূচনা হয়েছে পারস্পারিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক মানে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্ক, এ অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলো রিয়াদকে ফলো।
কারণ ঢাকার সাথে রিয়াদের সম্পর্ক অবনতি শুরু হয় তত্ববধায়ক সরকারের আমল থেকে। সৌদি আরাবে কর্মরত কিছু সংখ্যক প্রবাসীদের অনৈতিক কর্মকান্ড তার সাথে যোগ হয় সৌদিআরব শ্রম বাজারের প্রতিযোগী পার্শ্ববর্তিদেশ গুলোর মিডিয়া কর্তৃক বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার।
যার কারণে একসময় বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ শ্রমবাজার।
এরপর বাংলাদেশে সৌদি কূটনীতিক হত্যা, যোদ্ধা অপরাধীদের বিচার সহ নানা কারণে বাংলাদেশের বিরাট একটি অংশ এবং সৌদি প্রবাসী বাঙ্গালীরা ধরেই নিয়েছিল বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে রিয়াদের সাথে ঢাকার সম্পর্ক কখনই উন্নতি হবে না। এখানে কর্মরত ১৫ লাখ প্রবাসী একসময় ইমেজ সংকটে ভোগতে থাকে।
আওয়ামীলীগ প্রথম ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক উন্নয়নে অনেকবার উদ্যোগ নিলেও তেমন কোন কাজে আসেনি। তারপরও কূটনৈতিক তৎপরতা থেমে থাকেনি, সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সাউদের বৈঠক। এরপর আর ধারাবাহিকতা থাকেনি।
বাংলাদেশের রাজকোষ আজ যে পর্যায়ে আছে এর সবচেয়ে বড় অবদান প্রবাসীদের রেমিটেন্স। মোট রেমিটেন্স এর ৩০ ভাগ শুধু সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা যোগান দিয়ে থাকেন।
কিন্ত সৌদিআরব বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক আমদানিতে কড়াকড়ি বিশেষ করে কোটা পদ্দতি চালু করার কারণে ব্যাপক হারে কমতে থাকে শ্রমিক আমদানি সাথে পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করে রেমিটেন্স প্রবাহ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা ২য় বার নির্বাচিত হবার পর সৌদি আরব এর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আবারও উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। সৌদিআরবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট এর ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পর আলোর মুখ দেখে বাংলাদেশ।
জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশ কনস্যুলেট এর কনসাল জেনারেল এ কে এম শাহিলুল করিম বলেন, বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থানে নেই, বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ এখন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নারীর ক্ষমতা উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে বলে তিনি জানান।
সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সাউদ সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সৌদি আরবে সফরে এসে ঢাকা রিয়াদ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাবনার বিভিন্ন খাত নিয়ে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে সাম্প্রতিক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুও তাদের পর্যালোচনায় স্থান পেয়েছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি নিউজ এজেন্সি বৈঠকের পর এ খবর প্রকাশ করেছে।
বাদশাহ’র আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে গত শুক্রবার থেকে দেশটিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনি ও রোববার দেশটির সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
স্থানীয় সময় দুপুর ১ টায় জেদ্দার রাজ দরবার আল সালাম প্যালেসে বাদশাহ ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন দুই দেশের প্রতিনিধি দলের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়।
সৌদি প্রেস এজেন্সি’র রিপোর্টে জানানো হয়, ওই বৈঠকে সৌদি বাদশাহ’র সঙ্গে তার উপদেষ্টা ও মক্কার গর্ভনর প্রিন্স খালিদ আল ফয়সাল, প্রিন্স মানসুর বিন মিতাব বিন আবদুল আজিজ, ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আবুল আজিজ, মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. মোশাহেদ বিন মুহাম্মেদ আল এইবান, অর্থমন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল-আশশাফ, সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী ড. আদেল বিন জাঈদ আল-তোরাইফি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল-জুবায়ের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন হাজার আল মুতাইরী উপস্থিত ছিলেন।
ওই রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের পক্ষে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ অংশ নেন।