বগুড়ার বাজারে ক্রেতা সংকট , পানির দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১, ২০২০ , ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
বগুড়া প্রতিনিধি : প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় থমকে গেছে সারা বিশ্বের অর্থনীতি। বাংলাদেশেও পরেছে করোনার বিরুপ প্রভাব। এর প্রভাবে ধস নেমেছে উত্তরের সবজি বাজার গুলোতে। উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ার সব থেকে বড় সবজি বাজার মহাস্থান হাটে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে বেগুন, টমেটো, মূলাসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি বাজারে করোনার প্রভাব পরায় ধস নেমেছে । এই বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতো সবজি ক্রয় করতে ; কিন্তু বর্তমানে করোনা আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছেনা।তাই ক্রেতা সংকটে সবজির দামে ধস নেমেছে।
সরোজমিনে মহাস্থান হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি সাইজের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস্ ১০ টাকা । এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৪ টাকা, মুলা ১ টাকা, কাঁচা মরিচ ও করলা ১০ টাকা, শসা ৫ টাকা, টমেটো ৫ থেকে ৬ টাকা, ফুলকপি ৫ টাকা, বাঁধাকপি ৪ টাকা কেজি দরে। জানতে চাইলে বগুড়ার শিবগঞ্জের মূলা চাষি আবুল হোসেন জানান, ৪ বিঘা জমিতে মূলা চাষ করেছি। এখন বিক্রির জন্য মহাস্থান হাটে ভ্যানে করে নিয়ে এসেছি। কিন্তু মুলার দাম মন প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত দাম করছে। এতে করে ভ্যান ভাড়ার টাকাটাও হবেনা । এখন ভাবছি আর মূলা নিয়ে বাজারে আসবোনা। কারন মূলা বাজারজাত করার জন্য পরিষ্কার করতে খরচ হয়। ফলে পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয় । বগুড়া সোনাতলা এলাকার সবজি চাষি আবু সাইদ বেগুন নিয়ে এসেছেন মহাস্থান পাইকারি বাজারে । কিন্তু এসে দেখেন বেগুনের দর করছেনা কেউ। মাঝে মাঝে দু একজন ব্যবসায়ী আসলেও পানির দাম বলে চলে যাচ্ছেন। তিনি জানান, প্রতি মণ বেগুন ৮০ থেকে দেড়’শ টাকা করে দাম হাকা হচ্ছে। এতে করে পরিবহন খরচও উঠবেনা তার। শিবগঞ্জের মোকামতলা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, শসা জমিতে বেশি দিন রেখে নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে হাটে নিয়ে এসেছি। কিন্তু পাইকার কম থাকায় মাত্র ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এর আগে কখনো এত কম দামে শশা বিক্রি করিনি।’ বেগুন,মূলা, শশার পাশাপাশি ধস নেমেছে টমেটোর বাজারেও। শিবগঞ্জের আমজানি গ্রামের টমেটো চাষি হাফিজুর রহমান জানান, ‘কাল থেকে বাজারে আর টমেটো আনবোনা। টমেটো পচে জমিতে পড়লে সার হবে। তাও জমির উপকার হবে। কিন্তু কষ্ট করে বাজারে নিয়ে এসে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ পাঁচমণ টমেটো তুলতে দুইজন লোক লাগে।তাদের মজুরি দিতে হয় ৮০০ টাকা। এখন গাড়ি চলে না। সে কারণে ভ্যানে করে পাঁচমণ টমেটে মহাস্থান নিতে ৫০০ টাকা লাগবে। প্রতিকেজি টমেটো পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করলে পাঁচমণ টমেটোর দাম আসে ১০০০ টাকা। এখানেই লস ৩০০ টাকা। এছাড়া একজন মানুষের খাওয়া দাওয়াসহ আরও ১০০ টাকা ধরলে মোট লোকসান হবে ৪০০ টাকা। আর টমেটো ক্ষেত থেকে না তুললে এক টাকাও লোকসান হবে না।’
মহাস্থান হাটের ইজারাদার আলহাজ আজমল হোসেন দৈনিক মানবজমিনকে জানান, কাঁচা বাজারকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দুই থেকে তিন হাজার পাইকার আসে এ হাটে। কিন্ত সপ্তাহখানেক ধরে করোনা ভাইরাসের জন্য পাইকাররা না আসায় এমন অবস্থা হয়েছে।