সারাদেশে জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২, ২০২০ , ৯:০০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
দিনের শেষে ডেস্ক : ঢাকাসহ দেশের ১৪ জেলায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে মৃত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তবে এদের কেউ করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি। স্থানীয় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বরাতে জানা যায়, মৃতদের করোনা ভাইরাস ছিল কিনা তা জানতে আইইডিসিআর-এর কাছে নমুনা পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ভর্তি দুই রোগী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫ এবং অপরজনের ৩২ বছর। বুধবার সন্ধ্যায় ঢামেকের সহকারী পরিচালক (অর্থ) ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, মঙ্গলবার হাসপাতালের আইশোলেশন ওয়ার্ডে সর্দি-কাশি উপসর্গ নিয়ে ওই দু’জন ভর্তি হন। তাদের মধ্যে একজন মঙ্গলবার রাত ১০টায় এবং অপরজন বুধবার ভোর ৫টায় মারা যান। লাশগুলো ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দু’জনের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু হয়েছে আরো ১৭ জনের। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর দালাল বাজার এলাকায় একজন মারা গেছেন। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বয়স ৭০ বছর। তার জ্বর ও সর্দি ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। অন্যদিকে মৃতের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলেও জানায় স্থানীয় প্রশাসন। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব ধাওয়া গ্রামের এক ব্যক্তি জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে মঙ্গলবার মারা যান। আর এ আতঙ্কের কারণে ওই গ্রামের ২৩৫টি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই বাড়িটিকে লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্দুরকানীতে শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধা মারা গেলে পরিবারের লোকজন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার উত্তর ভবানীপুর গ্রামে ওই নারী মারা যান। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, কোনো করোনার উপসর্গ মনে হয়নি, স্বাভাবিক জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় স্থানীয় চিকিৎসা নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের গোল্লা জয়পুর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় এক কলেজছাত্র মারা গেছে। ওই ছাত্রের বোন ও ভাগনির গলাব্যথা হলে করোনাভাইরাস সন্দেহে ময়মনসিংহের এক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই রাতেই উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের মধুপুর বাজারের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনি এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদা খান জানান, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা রোগী হিসেবে তার মৃত্যু হয়েছে। বগুড়ায় করোনাভাইরাস সন্দেহে বুধবার আরও দু’জনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক কিশোর সন্ধ্যায় মারা যায়। সে ৬-৭ দিন ধরে পা ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। সন্ধ্যায় তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। ফেনীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার পশ্চিম ছনুয়া গ্রামে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন। রাজবাড়ীতে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিট থেকে ঢাকায় পাঠানো সেই ব্যক্তি মারা গেছেন। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে দুপুরে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানে তাকে ভর্তি না নিয়ে সেখানকার ডা. মামুন নামে একজন মেডিকেল অফিসার সাত দিনের ওষুধ লিখে দিয়ে রাজবাড়ীতে ফেরত পাঠান। সেখান থেকে রাজবাড়ী ফিরে আসার পথে রাতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরির মধ্যে তার মৃত্যু হয়। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় আমুয়ায় জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন বছরের শিশু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা গেছে। এ ঘটনায় ওই বাড়ির ৬ পরিবারের ৩০ জনকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামে বুধবার ভোরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গ্যাসজনিত কারণে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন বলেন, ওই গৃহবধূ কীভাবে মারা গেলেন, তা যাচাই করার জন্য বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা নড়িয়া উপজেলার মোকতারেরচর ইউনিয়নের ব্যাপারীকান্দি গ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার স্ত্রীসহ আশপাশের ২১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছেন উপজেলা প্রশাসন। পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া গ্রামে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়িতে এক ব্যক্তি মারা যান। জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, ওই ব্যক্তি যে করোনাভাইরাসে মারা যাননি- এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি। পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, ওই ব্যক্তি স্বাভাবিক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা গেছেন। নড়াইলে জ্বর-শ্বাসকষ্ট ও বমিতে মারা যাওয়া যুবককে গোসল-জানাজা ছাড়াই মঙ্গলবার রাতে কবর দিয়েছেন পরিবারের তিন সদস্য। নড়াইল পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এহসান হাবীব তুফান জানান, ওই পরিবারের সদস্যরা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। ভোলা জেলা সদর হাসপাতালে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া এক রোগীর মারা যাওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশ দেয়া ওই রোগীকে ওয়ার্ডবয়রা করোনা আইসোলেশনে নিয়ে যায়। এর পরই মারা যান ওই রোগী। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আনুমানিক ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরের মৃত্যু হলেও রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। এদিকে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া এক নারী মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।