আজকের দিন তারিখ ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// করোনা সংক্রমণ রোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কী ব্যবস্থা?

করোনা সংক্রমণ রোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কী ব্যবস্থা?


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৩, ২০২০ , ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক : সরকারের পক্ষ থেকে বুধবার জানানো হয়েছে যে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৫টি জেলাতেই কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৭৭২ জন। মারা গেছে ১২০ জন। এর মধ্যে কক্সবাজারে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ জন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে শুরু থেকেইে। এখন কক্সবাজারে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ায় ঐ আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কী পরিস্থিতি?
কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এই মূহুর্তে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে। সেখানে ক্যাম্পগুলোতে অপরিসর ঘরে রোহিঙ্গাদের গাদাগাদি করে থাকা এবং ভেতরকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে এর আগে জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ জানিয়েছে।
উখিয়া ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা মরিয়ম বানু বলছিলেন, ‘কেবল ঘরই ছোট তা নয়, অনেকগুলো পরিবার মিলে একটা টয়লেটে যেতে হয়। তাছাড়া খাবার পানির জন্যও লাইন দিতে হয়। কারণ একটা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করে ৫০টি ঘরের মানুষ।’
কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত মোট পাঁচজন মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলেও, এখনো সেখানে রোহিঙ্গা কেউ আক্রান্ত হননি।
কিন্তু মরিয়ম বানুর আশঙ্কা একজন কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুতই সেটা ছড়িয়ে পড়বে।
যদিও সতর্ক থাকার জন্য কী করতে হবে তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তবু তিন সন্তানের মা মরিয়ম বানু তার পরিবার নিয়ে উদ্বেগে আছেন।
তাছাড়া এই ভাইরাস যেহেতু সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, সে কারণে কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবনা বাড়ছে।
সুরক্ষার কী ব্যবস্থা?
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য মার্চের শুরু থেকেই ক্যাম্পগুলোতে সাধারণ চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর অধীনে খাদ্য, স্বাস্থ্যের মত জরুরী কাজ ছাড়া বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ এবং ভেতর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব দেশি ও বিদেশি বেসরকারি সংস্থা কাজ করে তাদের পরিবহন ক্যাম্পে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘র‍্যাশনিং পদ্ধতি’ চালু করা হয়েছে, অর্থাৎ এক সঙ্গে কেবল একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিবহনই ভেতরে যেতে পারবে।’
একই সঙ্গে ক্যাম্পের ভেতরে স্বাস্থ্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে ১১৬টি স্থানে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন বেডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাত ধোয়ার জন্য কয়েক শ ওয়াশ স্টেশন বসানো হয়েছে।
ক্যাম্পে প্রবেশের ক্ষেত্রে কারো বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করা হয়। এর বাইরে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নিয়ে বারবার হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের লোকবল ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা অপ্রতুল, মনিটরিং কম
কক্সবাজারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইইডিসিআরের একটি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর বাস হলেও, এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব জানিয়েছেন, দৈবচয়নের ভিত্তিতে তাদের বেছে নেয়া হয়েছিল। যদিও সব ক’জনেরই ফলাফল নেগেটিভ আসে।
এখন পর্যন্ত লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেছে এমন খবর পাননি জানালেও তিনি স্বীকার করেছেন পরীক্ষার সংখ্যা অপ্রতুল।
মাহবুব বলেন, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেলেই পরীক্ষা করা হবে। তবে ইতিমধ্যে নেয়া কড়াকড়ির ফলেই হয়ত এখনো কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।
শুরুতে সাধারণ জ্বর বা সর্দি-কাশি পরীক্ষা করাতে অনেক রোহিঙ্গা আসলেও, এখন তারা উপসর্গ থাকলেও আসতে চান না বলে জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অনেকেই উপসর্গ লুকিয়ে রাখেন বা গোপন করেন বলে জানিয়েছেন উখিয়া ক্যাম্পের মরিয়ম বানু।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের হিউম্যানিটেরিয়ান ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের এরিয়া ডিরেক্টর হাসিনা আখতার হক মনে করেন, এর পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে অনেকের মধ্যে এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে সমাজ বিচ্যুত হতে হবে।
এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাজ করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, সরকার চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতনতা চালালেও, ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা যেসব ঘরে থাকেন, তার আকৃতি ও পরিবেশ এবং একেকজনের পরিবারের সদস্য সংখ্যার বিচারে তা কতটা কাজে আসছে, সে প্রশ্ন রয়েছে। ব্র্যাকের হাসিনা আখতার হক মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সচেতন করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাড়ির মধ্যে সেটা তারা কতটা মেনে চলছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, এর একটি বড় কারণ হচ্ছে সেখানে এত অল্প জায়গায় এত বেশি মানুষ থাকে যে, সামাজিক দূরত্ব কিভাবে রাখছে সেটা নিশ্চিত করার উপায় নাই।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারের পটভূমিতে সরকার গত ১৬ই এপ্রিল সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে।
সতর্কতা ও প্রস্তুতি যথেষ্ট কি?
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেছেন, সতর্কতার জন্য ৪৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প লকডাউন করা হয়েছে৷
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লকডাউন পরিস্থিতি যাতে সেখানকার বাসিন্দারা মেনে চলে তা মনিটর করা হচ্ছে।
শাহজাহান আলী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে সেখানকার বাসিন্দাদের ভাষায় প্রচারণা চালানোর জন্য ইমামদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কেউ সংক্রমিত হলে কক্সবাজারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া উখিয়া এবং টেকনাফে জাতিসংঘের সহায়তায় নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। আলী বলেছেন, ওই হাসপাতালগুলোতে কেবল রোহিঙ্গা নয়, স্থানীয় মানুষেরাও চিকিৎসা নিতে পারবেন। এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে ৭৭০ শয্যার একটি হাসপাতাল স্থাপন করতে যাচ্ছ সংস্থাটি। হাসপাতালে ২১২টি বিশেষ শয্যা থাকবে, যেখানে মারাত্মক রোগীদের জরুরি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।