যেভাবে কাজ করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৫, ২০২০ , ৩:১৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস দ্রুত পরীক্ষার র্যাপিড কিট সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে পরীক্ষার আগে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, তাদের ১০ হাজার কিট প্রস্তুত। যার মধ্যে পরীক্ষার জন্য কয়েকশো নিতে পারে সরকার। এটা দিচ্ছি তারা (সরকার) যাতে কম্পারিজন (তুলনা) করতে পারে। আশা করা হচ্ছে যে, এই কিট দেয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। অনুমোদন পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে এক লাখ কিট দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এর আগে গত ২০ এপ্রিল কিট জমা দেয়ার কথা থাকলেও বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ল্যাবে যান্ত্রিক ত্রুটি তৈরি হওয়ায় সেই ব্যাচটি বরবাদ হয়ে যায়। ফলে পুরো ব্যাচটিই নতুনভাবে তৈরি করতে হয়েছে। যার কারণে ঠিক সময়ে সেগুলো হস্তান্তর করা যায়নি। ১৫ মিনিটের মধ্যেই এই কিট দিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গত ১৭ই মার্চ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জানায় যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য তারা একটি কিট তৈরি করেছে। করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ‘জিআর র্যাপিড ডট বট ইমিউনোঅ্যাসি’ কিট তৈরির জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ড. বিজন কুমার শীল।
যেভাবে কাজ করবে এই কিট
ব্লাড গ্রুপ যে পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হয়, র্যাপিড ডট ব্লট নামের এই কিট অনেকটা একই রকম পদ্ধতিতে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেডের গবেষকরা কিটটি তৈরি করেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য র্যাপিড টেস্ট কিটগুলোয় সাধারণত শুধু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে- যেটা ভারতে হয়েছে। ফলে সেখানে অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হতে পারে। ‘আমাদের এই কিটে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন, দুইটাই পরীক্ষা করা হবে। তিনি জানান, সিরিঞ্জের মাধ্যমে তিন সিসি রক্ত নেয়ার পর সেটা সিরাম আর সেল আলাদা করে ফেলা হবে। পরে সেটা থেকে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে দেখা হবে। সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ১৫ মিনিট সময় লাগবে বলে তিনি জানান। এর মধ্যেই বোঝা যাবে যে, রক্তদাতা করোনাভাইরাসের পজিটিভ নাকি নেগেটিভ। এই কিটগুলো ব্যবহার করে তারা ৯৩ শতাংশের বেশি সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান। সংক্রমিত বাংলাদেশিদের রক্তের উপর গবেষণার পরই এসব কিট তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এর আগে সরকার ৫টি রক্তের নমুনা পাঠানোর পর সেগুলোর উপর গবেষণা চালানো হয়।
কী সুবিধা দেবে এসব কিট?
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, লকডাউন তুলে দেয়ার পর দেশ বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আসতে শুরু করবে। তাদের দ্রুত পরীক্ষা করতে হবে। সেজন্য এই টেস্ট কিটগুলো উপকারে আসবে।
তিনি জানান, এসব কিট ব্যবহার করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহজেই প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। ফলে দেশের যেকোনো স্থানে এই কিট ব্যবহার করে করোনাভাইরাস রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় বেশি কাজে আসবে।
এগুলোর দাম কতো হতে পারে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই কিট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারি কোন দপ্তরের কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি প্রতিনিধি দলের কাছে কিট তুলে দেয়া হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, আমাদের এখন ১০ হাজার কিট প্রস্তুত আছে। কিন্তু সরকার আগে কয়েকশো পরীক্ষা করে দেখবে। এরপরে চাহিদার বিষয়টি বোঝা যাবে। যাচাই করে দেখার জন্য রবিবার এসব কিট বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ পরিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এই কিটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলছেন, এখনো তো আমরা কিট হাতে পাইনি। এটা পরীক্ষা না করে এ বিষয়ে আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব হবে না। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছেন, বিশ্বের যেসব দেশে র্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে অনেক ভুলভ্রান্তি পাওয়া গেছে। ফলে এই কিট ব্যবহার করলে কিছুটা ভুল তথ্য আসার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভুল ফলাফল – যেটিকে ফলস নেগেটিভ বলা হয় – আসতে পারে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস থাকেলেও র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে সেটি শনাক্ত নাও হতে পারে। এ ধরণের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ১৫ ভাগ। তিনি বলেন, এসব কিটের ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশন (রোগ নির্ণয়) প্রায় শতভাগ হওয়া প্রয়োজন। দেখা গেল কারো দেহে হয়তো করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব নেই, কিন্তু র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে ভুল হলে তাকে হয়তো পজিটিভ দেখানো হতে পারে। আবার যার দেহে করোনাভাইরাস আছে, তার ক্ষেত্রে যদি ফলস নেগেটিভ হয় তাহলে তো সে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে এবং অন্যদের সংক্রমিত করবে। তিনি বলেন, সাধারণত যেসব করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সুবিধা নেই, সেসব এলাকায় র্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করা যেতে পারে। র্যাপিড টেস্ট কিটের ক্ষেত্রে মান নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি। তবে এই প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত টেস্ট কিটগুলো পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সাফল্য পাওয়া গেছে। পিসিআর টেস্টের ক্ষেত্রেও তো কিছু ভুল পাওয়া যায়। সূত্র: বিবিসি