দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় ধস ফরাসি অর্থনীতিতে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২, ২০২০ , ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর ধাক্কায় অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে—এমন কথা ফ্রান্সের কর্তাব্যক্তিদের মুখে আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। তবে দেশটির অর্থনীতি যে এতটা গভীর সংকটে পড়বে তা হয়তো বিশ্লেষকরাও ধারণা করতে পারেননি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ফরাসি অর্থনীতির সংকোচন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতি মন্দার মুখে দাঁড় করিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রভাবশালী অর্থনীতির এ দেশকে। খবর রয়টার্স। ফ্রান্সের সরকারি স্ট্যাটিস্টিকস এজেন্সি আইএনএসইইআল গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফ্রান্সের গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট (জিডিপি) আগের তিন মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্য দিয়ে টানা দুই প্রান্তিক ধরে দেশটির জিডিপি নিম্নমুখী রয়েছে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় বা ১৯৪৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর এটাই কোনো প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি হারে সর্বোচ্চ পতন। এর আগে রয়টার্সের এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা প্রাক্কলন করেছিলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ফ্রান্সের জিডিপি হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমতে পারে। বাস্তবে তাদের প্রাক্কলনের তুলনায় অনেক বেশি সংকুচিত হয়ে এসেছে ফরাসি অর্থনীতি। এর আগে সর্বশেষ ১৯৬৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ফ্রান্সের জিডিপি ৫ শতাংশের ওপর কমেছিল। ওই সময় ছাত্র আন্দোলন, টানা ধর্মঘটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়ে দেশটির জিডিপি কমেছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দেশটির সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকোচনের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে চলমান লকডাউনকে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ থেকে ফ্রান্সজুড়ে লকডাউন ঘোষণা চলছে। এ সময় ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরে থাকতে নির্দেশ দেয় ইমানুয়েল মাখোঁ সরকার। শুধু ওষুধ ও খাবার কেনার জন্য মানুষের ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে চিকিৎসা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ জরুরি সেবায় নিয়াজিত ব্যক্তিরা ঘরের বাইরে যেতে পারছেন। মেয়াদ আরেক দফা না বাড়ালে ১১ মে অবধি দেশটিতে লকডাউন চলতে পারে। টানা লকডাউনের কারণে ফ্রান্সজুড়ে দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। গতি হারিয়েছে পর্যটন খাত। স্থবির হয়ে এসেছে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য। কমতে শুরু করেছে বিনিয়োগ। আইএনএসইইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরাসি অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি ভোক্তা ব্যয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ফ্রান্সে ভোক্তা ব্যয় আগের প্রান্তিকের তুলনায় রেকর্ড ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। শুধু মার্চেই আগের মাসের তুলনায় কমেছে ১৮ শতাংশ। পণ্য উৎপাদন কমেছে ৪২ শতাংশ। কমতির দিকে রয়েছে বিনিয়োগ পরিস্থিতিও। বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফ্রান্সের ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ কমেছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। চাকরি হারাতে পারেন কয়েক হাজার সক্রিয় কর্মী। বাড়তে পারে বেকারত্বের হার। ফরাসি ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ইউলৌ এরমো এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী জুন পর্যন্ত ফ্রান্সের জিডিপি ১৬ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হয়ে আসতে পারে। আর বছর শেষে এ সংকোচন দাঁড়াতে পারে প্রায় ৯ শতাংশে। মূলত টানা লকডাউনের তাত্ক্ষণিক প্রভাব হিসেবে দেশটির অর্থনীতিতে এ চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ফরাসি সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর ধাক্কায় চলতি বছর ফ্রান্সের সামগ্রিক অর্থনীতি ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের রক্ষায় প্রয়োজন হবে ১১ হাজার কোটি ইউরোর সংকটকালীন প্রণোদনা প্যাকেজের, যা দেশটির মোট জিডিপির ৪ শতাংশ। সংকটময় পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের বেসরকারি খাতের প্রতি দুজনের একজন কর্মীকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা ফরাসি সরকার মনে করছে, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং ও অবকাঠামো খাত সংকটের আগের অবস্থায় ফিরতে পারে। আর সেবা খাতের অবস্থা উন্নয়নে ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।