করোনায় আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ, মৃত্যু তিন লাখ ছুঁই ছুঁই
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৪, ২০২০ , ৫:১১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : কিছুতেই থামছে না মৃত্যু মিছিল। প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন। কবে করোনাভাইরাস থেকে পৃথিবী মুক্তি পাবে তা জানে না কেউ। বিশ্ব নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন পরিস্থিতি মোকাবিলায়। বিজ্ঞানীরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষেধক তৈরিতে। কিন্তু তারপরেও কিছুতে কিছুই হচ্ছে না। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ মানুষ। পাশাপাশি এ অদৃশ্য শত্রু থাবায় মৃত্যুবরণ করেছেন তিন লাখ মানুষ। করোনাভাইরাস নিয়ে লাইভ আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ২৯ হাজার ৭৪৪ জন। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৫ জন। তবে, আশার বিষয় হচ্ছে- এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজার ১৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৭০৫ জন।
মৃত্যুর তালিকার তিন নম্বরে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ১০৪ জন। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য ২য় অবস্থানে রয়েছে এ দেশটি। এখানে ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
মৃত্যুর তালিকায় স্পেনের পরের অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০ জন।
এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে রাশিয়ায়। আক্রান্তের হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। এখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ২৭১ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২১২ জনের।
এছাড়া জার্মানিতে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৮৬১ জনের। তুরস্কে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষের। কানাডায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ হাজার ২৭৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩০২ জনের।
ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় চীনে। সেখানে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৯২৯ জন এবং মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন।
এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৭২৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭৮৩ জনের। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর বুধবার নমুনা পরীক্ষা, আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। এদিন নতুন করে আরও ১ হাজার ১৬২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যা এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯ জন। এটিও একদিনে দেশে প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮২২ জন। আর এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ২৬৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন ২১৪ জন। ফলে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৬১ জন।
ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেলেও বাংলাদেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওইদিন তিন জন করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা অনেকটাই সমান্তরাল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা।
এদিকে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে সংকটাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে ইবোলার ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ কোভিড-১৯ রোগে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি চারটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা প্রথম ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। এ চারটি এখনও পর্যন্ত যারা ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে।
চার ভ্যাকসিনের বর্তমান অবস্থা
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তিন মাসের প্রচেষ্টায় চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এই ভ্যাকিসনটি বর্তমানে ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা যাচাই করার জন্য সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সময়ের দিকে ক্লিনিক্যাল এই ট্রায়ালের ফল আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক মডার্না ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশটির ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেক কোম্পানি মডার্না করোনার আরএনএ ব্যবহার করে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে এমআরএনএ-১২৭৩ নামের এই ভ্যাকসিনের ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে এবং ফেইজ-২ ট্রায়ালের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। মানুষের শরীরের কোষে এই ভাইরাসটি প্রয়োগের পর মলিকিউলার নির্দেশনা অনুযায়ী ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করে। শরীর এই ভাইরাল প্রোটিন শনাক্ত করার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বেইজিংয়ের সিনোভ্যাক বায়োটেক
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন বানরের দেহে প্রয়োগে সফলতার দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চীনা বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক নামের একটি কোম্পানি পিকোভ্যাক নামের এই করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। বর্তমানে এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে।
ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক করোনার সম্ভাব্য চারটি আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। ইতিমধ্যে তাদের তৈরি বিএনটি১৬২ নামের একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে সম্প্রতি। শিগগিরই দ্বিতীয় দফায় আরো ৩৬০ জন স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।