চিরচেনা রূপে ঢাকা,বিভিন্ন জায়গায় যানজট
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১, ২০২০ , ৬:১১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে যেদিন চালু হলো সরকারি-বেসরকারি সবধরনের অফিস, সেদিনই পাওয়া গেল করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্তের খবর। অবশ্য কয়েক দিন ধরেই এ দুটি সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তারপরও অফিস শুরুর প্রথমদিনই ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে যানজট। ব্যাংক, শেয়ারবাজারেও ছিল ভিড়। সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকা যেন ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস চালুসহ গণপরিবহন চালানোর কথা বলা হলেও বহু জায়গায় এর ব্যবহার প্রায় ছিল না। এতে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বেড়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। গত শনিবার তা শেষ হয়। গতকাল রবিবার থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। এ সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস চলাচল শুরু হবে আজ সোমবার থেকে। বিপণি বিতান আর দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছিল রোজার মধ্যেই। তবে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই মুহূর্তে খুলছে না। সকালে ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চে অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি। এ জন্য উদ্বেগ-আতঙ্ক রয়েছে।
সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিস করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবরা। ছিলেন অন্যান্য কর্মকর্তারাও। প্রথমদিনে অফিসে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এছাড়া অফিস করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ আরো কয়েকজন মন্ত্রী। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যও প্রথমদিন অফিস করেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম অফিস করেছেন বলে তাদের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, সকালেই শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, শিক্ষার দুই সচিব অফিসে এসেছেন। চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছেন তারা। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য অফিসাররাও এসেছেন। এদিন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একটি পর্যালোচনা সভাও হয়েছে।
তবে এদিন আগেরমতো কর্মচঞ্চল ছিল না সচিবালয়। কোনো কোনো কর্মকর্তাকে পিপিই পরে অফিস করতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন পর সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলেও তাতে কোনো উদ্দীপনা ছিল না। সবার চোখে-মুখেই ছিল এক ধরনের চাপা আতঙ্ক, অজানা ভয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মুখেই ছিল মাস্ক। অনেকের হাতে ছিল গ্লাভসও।
অন্য বছরগুলোয় ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিস খোলার দিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোলাকুলি, হ্যান্ডশেক হলেও এ বছর তা হয়নি। এবার একে অপরের কাছাকাছি নয়, বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই কিছুটা দূরে থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। তবে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি ভুলে গিয়ে কেউ কেউ কাছে এগিয়ে এলেও পরক্ষণেই ভুল বুঝতে পেরে বিব্রত হয়েছেন।
সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনরত ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রাজিব দাস জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে সচিবালয়ে দর্শনার্থী পাস দেয়া আপাতত বন্ধ। পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।
করোনা তাণ্ডব যখন বাড়তির দিকে ঠিক তখনই সাধারণ ছুটি শেষে গণপরিবহন চালুসহ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোকে করোনার মতো দুর্যোগ ম্যানেজ করে চলতে হবে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের চলতে হবে। বর্তমানের এ ছাড় যেন বিষাদে পরিণত না হয়। মালিক, শ্রমিক, যাত্রী সাধারণ সবার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। গতকাল রবিবার বাসা থেকে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবে না, সে জন্যই তারা সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার মতো কথা বলতে পারে। ‘লকডাউন’ খোলার বিরুদ্ধে বিএনপির বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিন নানা কথা বলছেন। দেশের কোটি কোটি খেটে খাওয়া মানুষের কথা তারা মোটেও চিন্তা করে না। সে জন্যই তারা সবকিছু একেবারে বন্ধ করে দেয়ার মতো কথা বলতে পারে, কারফিউ দেয়ার কথাও মাঝেমধ্যে তারা বলে।
এদিকে, ‘অস্বাভাবিক দীর্ঘ’ সাধারণ ছুটি শেষে গতকাল রবিবার সকাল থেকে গণপরিবহন নেমেছে ঢাকার সড়কে। কর্মজীবী মানুষ ছুটে চলছে তাদের গন্তব্যে। যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে লঞ্চ টার্মিনাল, রেল ও বাস টার্মিনালগুলোতে। ঢাকা যেন ফিরেছে সেই চিরচেনা রূপে। সকাল থেকে রাজধানীর মালিবাগ, কাকরাইল, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, ফার্মগেট, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, পান্থপথ, সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলছে সড়কে। তাতে চড়েই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়েছেন। ছুটে চলছেন কর্মস্থলে উদ্দেশে। বনানী এলাকায় দেখা গেছে, দীর্ঘ যানজটও। ভিড় ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতেও। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে, দক্ষিণ বঙ্গে যাতায়াতকারী মানুষের ভিড়। তবে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলার প্রবণতা দেখা যায়নি অধিকাংশের মধ্যেই।