আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য গতানুগতিক বাজেটে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়

গতানুগতিক বাজেটে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৪, ২০২০ , ৪:০১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক :  প্রস্তাবিত বাজেট কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যেমন হওয়া দরকার ছিলো তেমন হয়নি। বাজেট অন্যান্যবারের মত গতানুগতিক ধারাতেই প্রণয়ন করা হয়েছে। যেটি বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা যথেষ্ট নয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের নেতৃত্বে সানেম প্যানেলে আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও সানেমের গবেষণা ফেলো মাহতাব উদ্দিন ও সানেমের রিসার্চ এসোসিয়েট ইশরাত শারমীন। ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমের মাধ্যমে এ বাজেট পর্যালোচনায় প্রায় সত্তর জন অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক, উন্নয়ন কর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন।

সংস্থাটির মতে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে সেটি প্রশংসনীয়, তবে যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন ড. রায়হান। অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায়, বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলেও সেটির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাস্তবায়নের ওপর নিয়মিত তথ্য প্রদান করা উচিত বলে প্রস্তাব করেন তিনি। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকৃত বাজেটের সঠিক ব্যবহারের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও সক্ষমতার অভাব নিয়ে আলোচনা করা দরকার ছিলো বলে মনে করেন ড. সেলিম রায়হান। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাওয়া এবং জনগণের কাছে সেটি সহজলভ্য করে তোলার জন্যও বাজেটে বরাদ্দ থাকার দরকার ছিলো। ড. রায়হান আরো বলেন, বাজেটের বেশ কিছু ধারায় তথ্য ও উপাত্তের অসঙ্গতি চোখে পড়ে। এটি নিয়ে সাবধান হওয়া উচিত যেহেতু, ভুল তথ্য উপাত্তের ফলে ভুল নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ হতে পারে।

তিনি বলেন, নতুন করে দরিদ্র্য হয়েছেন যারা তাদের জন্য বাজেটে বিশেষ কিছু নেই এবং এ ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃতভাবে নগদ ও খাদ্য সহায়তা, বেকার ভাতা, ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতো। কালো টাকা সাদা করা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ড. রায়হান বলেন যে, এই ধরণের পদক্ষেপ অতীতেও কোনো সুফল বয়ে আনে নি, বরং সৎ লোকদের নিরুৎসাহিত করেছে। একইসাথে, এই ধরণের পদক্ষেপ সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেটিও ভেবে দেখা দরকার। তিনি বলেন, বাজেটে পোশাক শিল্পকে যে পরিমাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অন্য রপ্তানি শিল্পকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

ব্যাংকিং সেক্টরের সংকট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন যে, ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে বাজেট ও প্রণোদনা প্যাকেজ উভয়েরই আংশিক অর্থায়ন করা হচ্ছে, কিন্তু, ব্যাংকিং সেক্টরের যে সংকটগুলো আছে, সেটির মধ্যে থেকে এটি সম্ভব কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। বাজেটে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা থাকা দরকার ছিলো। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে, বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি হলেও সেটি তেমন কোনো সমস্যা নয়। তবে, বাজেট অর্থায়নের জন্য রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট ধরা হয়েছে সেটি অবাস্তব। এজন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যেমন বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ’র কাছ থেকে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার ওপর জোর দিয়ে আলোচনা করতে হবে। তবে রাজস্ব আদায়ের জন্য স্বার্থান্বেষী মহলের চাপ মোকাবেলা করতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্টের অর্থায়ন কর্তন করতে হবে। ড. রায়হান সানেমের প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন যে, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ তিন বছর দেরি করানো দরকার, কারণ এলডিসি উত্তরণ হয়ে গেলে, বাংলাদেশ বেশ কিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাবে, যেটি অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলতে পারে। এ প্রসঙ্গে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বাজেটে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে কিন্তু সেটিকে কাজে পরিণত করাই চ্যালেঞ্জ। রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাবের আলোচনা করতে গিয়ে ড. রায়হান বলেন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হলে এমন হতে পারে যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে, যেমনটা ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় হয়েছিলো।