আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য শতাধিক শিল্প-কারখানায় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে

শতাধিক শিল্প-কারখানায় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৬, ২০২০ , ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : কাজ শেষে গাদাগাদি করে কারখানা থেকে বের হচ্ছেন শ্রমিকরা। কখনও কখনও বেতন ভাতার দাবিতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখেই করেছেন আন্দোলন। অনেক কারখানাতেই নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে না হ্যান্ড স্যানিটাইজার। স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীন মালিক, শ্রমিক উভয়পক্ষই। এরমধ্যেই ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। দেশের প্রধান রপ্তানিখ্যাত গার্মেন্টসসহ ১১০টি শিল্প কারখানায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। এতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৫ জন শ্রমিক। করোনা সংক্রমন ঠেকাতে শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে কি-না, এ বিষয়ে নজরদারি করছে শিল্প পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করা হলে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউন করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে মালিকদের জানানো হয়েছে।  শিল্প-কারখানায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন শিল্প পুলিশের সদস্যরাও। শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে অনিহা দেখাচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি যদি না মানে তাহলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কী-না বিষয়টি নজরদারি করতে গিয়ে শিল্প পুলিশের ১৯০ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকজন সুস্থ হয়েছেন। তবে অনেক সদস্য এখনও আইসোলেশনে আছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্যভুক্ত ৪৩ কারখানায় ৭১ জন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সদস্যভুক্ত সাত কারখানার আট জন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্যভুক্ত একটি কারখানায় দুই জন, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষের ছয়টি কারখানায় নয় জন,  ১৫ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ১১ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত।  সাভার-আশুলিয়ায় ২০ কারখানার ৪৬ জন এবং গাজীপুরে ১৫ কারখানার ২২ শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত। বিকেএমইএর নারায়ণগঞ্জের চার কারখানায় ২২ শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত। সূত্র জানায়, করোনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাত্তয়ার পর মালিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ শর্তসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু অনেক কারখানার মালিক তা মানেন নি।
সূত্রমতে, শুধু পোশাক কারখানা খোলা রাখাই করোনা ছড়ানোর জন্য দায়ী নয়। সামাজিক দুরত্ব না মানা ও বিভিন্নস্থানে লোকসমাগমও এ জন্য দায়ী। কারখানা বন্ধ হয়ে যাত্তয়ার পর অনেক শ্রমিক একস্থানে আড্ডা দিয়েছে। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। ঈদে অনেক পোশাক কারখানার মালিকরা বেতন ও ভাতা দিতে গড়িমসি করার কারণে কর্মরত শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে। মিরপুরে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় করোনা ছড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শিল্প প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায়। অনেকেই একস্থান থেকে আরেক স্থানে যান। এসময় শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ছড়াতে পারে। এছাড়াও টঙ্গী ও সাভার এলাকায় বিভিন্ন ধরণের কারখানা রয়েছে।  সংক্রমণের হার সেখানে বেশি। শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জোর তাগিদ দেয়া হয়। সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বা শ্রমিকরা মাস্ক পরিধান করছে কী-না, তা নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যাত্তয়ার পরই অধিকাংশ কারখানার মালিক আর স্বাস্থ্য বিধি মানার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, কারখানায় শ্রমিক প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে। বের হত্তয়ার সময় যাতে নিরাপদ দূরত্বে লম্বা লাইন করে বের হয়। কিন্তু শ্রমিকদের মধ্যে এটি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। একসঙ্গে গাদাগাদি করে বের হওয়ার কারণে করোনা ভাইরাস আরও ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত শিল্প কারখানায় যাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে করোনায় এক শ্রমিক মারা গেছে। সেখানে কর্মকর্তারা গেলে তাদের সবাই ঘিরে ধরে এবং সরকারের কাছে মৃতের পরিবারকে সহয়তার জন্য চাপ দেয়। এসব কারণে কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে কারখানাগুলোতে যাননি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (শিল্প পুলিশ) আব্দুস সালাম জানান, কারখানার মালিকেরাই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। পুলিশ তাদের সতর্ক করেছে। তিনি আরও জানান, যেসব কারখানায় করোনা ছড়িয়েছে সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কী-না তা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। যদি তারা স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে এসব কারখানা জনস্বার্থে লকডাউন করা হবে।