চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে আবেদন
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৬, ২০২০ , ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : হাসপাতালে আসা সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এর আগে সোমবার করোনাকালে রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া, অবহেলায় মৃত্যু, আইসিইউ বণ্টন, অক্সিজেন সরবরাহ ও বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিংসহ সকল রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা নিয়ে ১০ দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত পৃথক কয়েকটি রিট আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) এসব নির্দেশনা দেন।
আদালতের ১০ দফা নির্দেশনা হচ্ছে
১. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০শে জুনের পূর্বে আদালতে দাখিলের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের সচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনাসমূহ পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। ৩. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২৪শে মে জারিকৃত নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর থেকে ৫০শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকসমূহ চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত কতজন কেভিড, নন কেভিড রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫০ শয্যার অধিক হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের একটি তালিকা প্রেরণ করতেও বলা হয়েছে। ৪. বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে পালন করছে কিনা, সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পেরিত ওই সকল প্রতিবেদন আবার আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। ৫. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের বিশেষত ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা সহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কেভিড নন কোভিডসহ সকল রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৬. কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে তা অবহেলাজনিত মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ফোজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। ৭. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন হাসপাতালের আইসিইউ তে কতজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কি অবস্থা আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে, সেজন্য পৃথকভাবে আইসিইউ হটলাইন নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নাম্বার গুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ৮. আইসিইউ এ চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৯. অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্তিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয় পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। ১০. সরকার ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোভিড রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ সবুজ ও জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় লকডাউন বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়া সংগত হবে না মর্মে আদালত মনে করে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ই জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে না দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়। রিটে রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরত দেয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। আইনজীবীরা হলেন-এডভোকেট এএম জামিউল হক ফয়সাল, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।