বিদেশে অরক্ষিত প্রবাসীরা আয়ে বড় ধাক্কার শঙ্কা
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৯, ২০২০ , ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : সর্বগ্রাসী মহামারী করোনার আঘাতে দেশের অর্থনীতির সব সূচক বিধ্বস্ত। তবে অবশিষ্ট আছে প্রবাসী আয়, কিন্তু তাও অরক্ষিত; কারণ বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর্মহীন, চাকরিচ্যুত এবং ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছেন। তাই আগামী অর্থবছরে (২০২০-২১) রেমিটেন্সে বড় ধাক্কার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমবে ২২ শতাংশ। নীতিনির্ধারণ পর্যায় থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ হারিয়ে ফেরত আসতে পারে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রায় ১৫ হাজার কর্মী বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও তারা যেতে পারেননি। ফলে এসব কর্মী দারুণ শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি রিয়াদভিত্তিক জাদওয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির একটি রিপোর্টে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস মিলেছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরেই ১২ লাখ বিদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব। বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসী আয়ের অংক এবং প্রবাসীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য সৌদি আরব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সৌদি আরবে বিদেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের এ তথ্য দেশের জন্য বড় দুঃসংবাদ। শুধু সৌদি নয়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের চিত্র একই। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকায়ও অভিন্ন চিত্র। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার এ সময় কোনো শ্রমিক বিদেশে যেতে পারবে না বরং ফেরত আসবে। তেলের মূল্যপতন ও করোনার কারণে বিদেশে যেসব প্রবাসী আছেন, তাদেরও মাথাপিছু আয় কমবে। এছাড়া কেউ সঞ্চয় করতে পারছে না। ফলে নতুন অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান বলেন, করোনা আর তেলের মূল্যপতন মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। তার একটা নেতিবাচক প্রভাব অভিবাসীদের ওপর পড়বে। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোও করোনায় বিধ্বস্ত। ফলে নতুন অর্থবছরে রেমিটেন্সে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্ততার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ কর্মরত। এর বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যে আছেন। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রেমিটেন্স আসে এ অঞ্চল থেকে। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগই আসে সৌদি আরব থেকে। গত মে মাসেও প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ পাঁচটি উৎস দেশ হল- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত ও যুক্তরাজ্য। এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে আগামী তিন-পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। দূতাবাসের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ বিদেশি কর্মী প্রতিস্থাপনের নীতিও এর আরেকটি কারণ হতে পারে। শ্রমিক ফেরত আসার আশঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করে গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে দূতাবাস। গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ফোনালাপে বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকে শ্রমিক ফিরিয়ে আনতে সম্মতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশের অনুরোধে পর্যায়ক্রমে এ শ্রমিকদের ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এপ্রিলে রেমিটেন্স আরও কমে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে আসে, তাও গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১০ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৭০৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়েও ৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।