আজকের দিন তারিখ ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাবিশ্ব করোনার অজুহাতে মুসলিমদের মরদেহ পোড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা

করোনার অজুহাতে মুসলিমদের মরদেহ পোড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৩, ২০২০ , ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব


দিনের শেষে ডেস্ক :  শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু মুসলিমদের অভিযোগ, করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে দেশটির সরকার। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনও মুসলিম মারা গেলে তার মৃতদেহ কবর দেয়ার বদলে ‘দাহ’ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অথচ ইসলাম ধর্মে তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

গত ৪ মে তিন সন্তানের মা ৪৪ বছর বয়স্ক মুসলিম মহিলা ফাতিমা রিনোজাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি কোভিড -১৯ সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

ফাতিমা শ্রীলঙ্কা র রাজধানী কলম্বোর বাসিন্দা। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে। যেদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেদিন থেকেই কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের ওপর ‘চড়াও হয়‌’বলে অভিযোগ করেন ফাতিমার স্বামী মোহামেদ শফিক।

মোহামেদ শফিক জানান, ‘পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী কর্মকর্তাদের নিয়ে আমাদের বাড়ির দরজায় এসে হাজির হয়। আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় এবং সর্বত্র জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। তাদের এ আচরণে আমরা সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি তিন মাসের বাচ্চাকেও ভাইরাস টেস্ট করা হয়। তারপর তারা আমাদেরকে কুকুরের মত টেনে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিযে যায়।’

পুরো পরিবারটিকে সেখানে এক রাত আটকে রাখা হয়। পরদিন তাদের ছেড়ে দিয়ে দুই সপ্তাহ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

ইতিমধ্যে মারা যান ফাতিমা। তিনি একাই হাসপাতালে ছিলেন। তার পরিবারকে কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হলো। ফাতিমার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে বলা হলো হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের মৃতদেহ সনাক্ত করতে।

তাকে বলা হলো, ফাতিমার মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তাই তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হবে না।

ফাতিমার ছেলে জানান, তার মায়ের মৃতদেহ দাহ করার অনুমতিসূচক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে তাকে বাধ্য করা হয়। যদিও মুসলিম আইনে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলাকে অবমাননাকর বলে মনে করা হয়।

এ সম্পর্কে ফাতেমার স্বামী শফিক আরও জানান, ‘আমার ছেলেকে বলা হয়, আরো কিছু পরীক্ষা করার জন্য ফাতিমার দেহের কিছু অংশ কেটে নিতে হবে।’ ‘কিন্ত তার যদি করোনাই হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরের অংশ কেটে নেয়ার দরকার কী?’ প্রশ্ন শফিকের।

শফিক মনে করেন, আসলে ফাতেমার ক্ষেত্রে কী হয়েছিল এবং কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে তার পরিবারকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ।

কেবল ফাতিমার পরিবার নয়, শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি আরো কিছু মুসলিম পরিবারের অভিযোগ, করোনা মহামারিকে ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনায় মৃত মুসলিমদের দাফনে কোনও আপত্তি তোলেনি। বরং শ্রীলঙ্কার এ জাতীয় ধর্মীয় বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ ও ডব্লিউএইচও-সহ বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন।

সে দেশের মুসলিমরা বলছে, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগোষ্ঠী যেরকম ধারাবাহিকভাবে হয়রানি এবং ভীতি সৃষ্টি করছে, এটি তার সবশেষ উদাহরণ।

করোনা মহামারির শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া কেবল শ্রীলঙ্কা নয়, করোনার অজুহাতে মুসলিম বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে ভারতও। মহামারির শুরুতে মুসলিম মুসল্লিদের বিরুদ্ধে করোনা বিস্তারের অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে তখন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। এমনকি ভারতের কিছু কিছু রাজ্যের হাসপাতাল থেকে মুসলিমদের চিকিৎসা দেয়া হবে না বলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, করোনা আঘাত হানার আগেই দিল্লির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন বহু মুসলিম।