আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি : সরকারকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে কঠোর অবস্থান নিতে হবে

স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি : সরকারকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে কঠোর অবস্থান নিতে হবে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৫, ২০২০ , ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র আমাদের দেখতে হচ্ছে। এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সরকারি ওষুধ থেকে শুরু করে জীবাণুরোধক মাস্ক সরবরাহ নিয়েও চলছে নানা ধরনের অনিয়ম। কোনো প্রতিষ্ঠান মানহীন মাস্ক সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা, আবার কোনো প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় কম দিয়েও বিল উত্তোলন করছে বেশি। চলমান সংকটকালে এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে নামি প্রতিষ্ঠানগুলোও। বলতে গেলে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক অনিয়মই যেন স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য মিঠু সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঠিকাদার মিঠুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও তার সিন্ডিকেট ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়মের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম গডফাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে তারা দাবি করেছেন। তাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন যে, মিঠুকে আশ্রয় দেয়ার মতো একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। তাদের মতে, দুদকের সুপারিশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষিত ‘কালো তালিকাভুক্ত ১৪ ঠিকাদারের’ মধ্যে তার নাম নেই। যা সন্দেহের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। চুনোপুঁটিদের ‘কালো তালিকায়’ রেখে কার ছত্রছায়ায় বারবার বেঁচে যাচ্ছেন মিঠু তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মিঠুর লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজ এবং টেকনোক্র্যাট লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেড় যুগ ধরে স্বাস্থ্য খাতের প্রায় ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। এ সময়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেও কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নেয়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, চলমান করোনা মহামারিতে চিকিৎসা উপকরণের দিকে অধিক মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশি ঝোঁক চিকিৎসাবহির্ভূত খাতে। দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসা সরঞ্জামে যত অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে। এ প্রবণতাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ না করলে মৌলিক অধিকারের প্রতি অবহেলার মতো প্রশ্নও সামনে আসবে। তাছাড়া এভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি চলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দেবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের দিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী নিজে উপর্যুপরিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা দিয়ে আসছেন। মিঠু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটাসহ ঋণ ব্যবহারে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সরকারকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।