আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য করোনায় এলোমেলো ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম

করোনায় এলোমেলো ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৪, ২০২০ , ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস সংক্রমণ অন্য সবকিছুর মতো ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম এলোমেলো করে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের বিতরণ ও আদায়ের যে স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ছিল, তা মারাত্বকভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তবে করোনার মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উদ্যোগ চালু হওয়ায় ক্ষুদ্র ঋণের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে অনেকেই নগদ টাকার সংকটে পড়ে ঋণ নিতে চাইছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ, কৃষক, ছোট ছোট ব্যবসায়ী ঋণের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের কাছে যাচ্ছেন। আবার পুরোনো গ্রাহকরাও নতুন ঋণের জন্য আসছেন। তবে আদায় কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নীতিগতভাবে ঋণ বিতরণ কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ঋণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রায় ৮০০ প্রতিষ্ঠান বছরে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে বিভিন্ন খাতে। প্রান্তিক পর্যায়ের সাড়ে তিন কোটি মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র চাষি, দিনমজুর, ছোট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা এর সুবিধাভোগী।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ ছিল। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গত মাসের মাঝামাঝি থেকে থেকে সীমিতভাবে নতুন ঋণ দেওয়া শুরু করেছে। এদিকে যারা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা বা বিভিন্ন উদ্যোগে যুক্ত, তাদের অনেকেই করোনার প্রভাবে ঋণ ফেরত দিতে পারছেন না। গত তিন মাসে ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহকদের অনেকেরই পুঁজিতে টান পড়েছে। এমনকি অনেক গ্রাহক তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেয়ে ফেলেছেন। এতে করে অনেকেই চলতি ঋণ পরিশোধের আগেই নতুন ঋণ চাইছেন। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের এনজিওর মাধ্যমে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে তিন হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন তারা। একই উদ্দেশ্যে পিকেএসএফের ৫০০ কোটি টাকাও দ্রুত বিতরণের সুপারিশ এসেছে। তারা বলেছেন, ক্ষুদ্র ঋণের তহবিলের বড় উৎস হলো ব্যাংক ঋণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত তহবিল পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তারা সংশয়ে আছেন।
দেশের ক্ষুদ্র ঋণের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের গ্রাহকদের অনেকে সঞ্চয় তুলে নিয়েছেন। এপ্রিল থেকে দেশের সবচেয়ে বড় এই ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা গ্রাহকদের সঞ্চয় ফেরত দেওয়া শুরু করে। জুন পর্যন্ত ছয় লাখ ৪৫ হাজার গ্রাহককে ২৪৯ কোটি টাকা সঞ্চয় ফেরত দিয়েছে। আবার অনেকে নতুন ঋণের জন্য তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গত ১০ মে থেকে ঋণ কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। জুন পর্যন্ত দুই লাখের বেশি গ্রাহককে তারা এক হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ১ জুলাই থেকে ব্র্যাকের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সামেরান আবেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় তাদের গ্রাহকদের অনেকেই মূলধন সংকটে পড়েছেন। এসব গ্রাহকের প্রয়োজন মেটানো ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্র্যাক ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, চলতি বছরে ব্র্যাক ৪৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নেয়। প্রথম তিন মাস কার্যক্রম ঠিক থাকলেও পরের তিন মাস কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ ছিল। বর্তমানে সীমিত পরিসরে কিছু গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। এখন বাকি সময় কী করা যাবে, তা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। এই সংকটকালীন সময়ে অর্থনীতি সচল রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ তথা সরকারকেও নীতি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন।