২৯০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৬, ২০২০ , ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : করোনাকালে ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ৪টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ২৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একই সঙ্গে জুন মাসের বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত বিলের সমন্বয় করারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ এসব কথা জানান।
বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদ বলেন, কোনো গ্রাহককেই অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হবে না। একজন গ্রাহকও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। সব অভিযোগের বিল সমন্বয় করা হচ্ছে। মিটার না দেখে পূর্বের বিলের সঙ্গে গড় করে মোট বিল করায় কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সব বিষয়ে তদন্ত চলছে। অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভ‚তুড়ে বিলে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকর্মচারীকে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। ৬০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ১২ জন মারা গেছেন। তারা আগের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে বিল তৈরি করেছেন। এতে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বেশি বিল এসেছে। ইতোমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে সেসব বিল চলতি বা পরের মাসের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। আরো অভিযোগ এলে সেগুলোও সমন্বয় করা হবে। অনাকাক্সিক্ষত সমস্যার কারণে আমারা গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা বলতে চাই, গ্রাহকের ব্যবহার করা বিলের অতিরিক্ত এক টাকাও পরিশোধ করতে হবে না।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৬টি সংস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণের কাজ সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ডিপিডিসির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৯ জন গ্রাহক রয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জনের অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ এসেছে। এই সংস্থার ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডেসকোর ১০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এখানেও অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ২ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক আছে। এখানে ৩৪ হাজার ৬৮১টি বিলের অভিযোগ এসেছে। অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। নেসকোর ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৮ জন গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জনের বিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে নেসকোর ২২৩ জনকে তলব করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। পিডিবির ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জন গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ এসেছে ২ হাজার ৫৮২ জনের। যার সবগুলো ইতোমধ্যেই নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে এখন থেকে মিটারের রিডিং দেখেই নিশ্চিত হওয়ার পর বিল করা হবে। এতে কারো গাফিলতি থাকলে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায় কোম্পানিগুলোকে তদন্তকালে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে ভ‚তুড়ে বিদুৎ বিল তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ডিপিডিসির পর আরো ৩টি বিতরণ কোম্পানি তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো টাস্কফোর্সের নিজ নিজ কোম্পানির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে সবগুলো কোম্পানি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ
বিল সমন্বয়ে কাজ করছে। গত শনিবার ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) তাদের এক নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ২ জন চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ৩৬টি এনওসির (স্থানীয় কার্যালয়) প্রত্যেকটির নির্বাহী প্রকৌশলীকে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। বিভিন্ন জোনের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির নির্দেশ দেয়া হয়।
ডিপিডিসির পর গতকাল রবিবার ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ২ জন মিটার রিডারকে অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি আরো ৭ জনকে শোকজ করা হয়েছে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) তাদের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে। বরখাস্ত করা হয়েছে দুজন মিটার রিডারকে। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।
আজ সোমবার নেসকোর তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম জানিয়েছেন। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২২৩ জনকে শোকজ করেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (আরইবি) এখনো শাস্তির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপের কথা জানায়নি। আইবির অধীনে থাকা সমিতিগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ এবং বিল আদায় করে। প্রতিটি সমিতির হিসাবও আলাদা। আরইবি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে জানাতে সমিতিগুলোকে বললেও সমিতির জেনারেল ম্যানেজাররা কিছুই জানায়নি।
উল্লেখ্য, করোনাকালে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ ওঠে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টি তদন্তের জন্য গত ২৫ জুন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।