স্বাস্থ্যে কেলেঙ্কারির দায় কে নেবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৪, ২০২০ , ১২:২৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর এতে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এতে আমরা আশাবাদী হতে পারি। গত রবিবার জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে তার স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। ৬ জুলাই করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণার ঘটনায় রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয় র্যাব। এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে এখন খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম প্রকাশ হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, করোনা চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দেয়া হলো। করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে গত রবিবার পাঁচ প্রতিষ্ঠানের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উল্লিখিত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে স্বাস্থ্য খাতের কি দুরবস্থা। দুর্যোগকালীন এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সরকারি ওষুধ থেকে শুরু করে জীবাণুরোধক মাস্ক সরবরাহে নানা ধরনের অনিয়ম আমরা আগে দেখেছি। কোনো প্রতিষ্ঠান মানহীন মাস্ক সরবরাহ করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা, আবার কোনো প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় কম দিয়েও বিল উত্তোলন করছে বেশি। চলমান সংকটকালে এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে নামি প্রতিষ্ঠানগুলোও। বলতে গেলে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক অনিয়মই যেন স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে। করোনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার স্পর্ধাও দেখিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। অনেক প্রবাসী এই হাসপাতালের সার্টিফিকেট নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। ক্ষুণ্ণ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। সাহেদ করিমের অপকর্মের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা জড়িত। সাহেদের টাকায় অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। অথচ রিজেন্ট হাসপাতালসহ মাস্ক ও করোনাকালে কেনাকাটায় কেলেঙ্কারির ঘটনার পর গুটিকয়েক কর্মকর্তাকে বদলি ছাড়া কারোর বিরুদ্ধে বড় কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ না করলে মৌলিক অধিকারের প্রতি অবহেলার মতো প্রশ্নও সামনে আসবে। তাছাড়া এভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি চলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দেবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের দিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, চলমান করোনা মহামারিতে চিকিৎসা উপকরণের দিকে অধিক মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশি ঝোঁক চিকিৎসাবহিভর্‚ত খাতে। দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসা সরঞ্জামে যত অর্থ খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে। এ প্রবণতাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী নিজে উপর্যুপরিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা দিয়ে আসছেন। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সরকারকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।