তুখোড় রাজনীতিকের নীরব প্রস্থান
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৪, ২০২০ , ৯:৩৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: রাজনীতি
দিনের শেষে ডেস্ক : ছাত্ররাজনীতি থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। এমপি-মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি বড় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ। সবকিছুতেই শাজাহান সিরাজ ছিলেন একসময় দারুণ সক্রিয়। কিন্তু শেষের কয়েক বছর তিনি ছিলেন অনেকটাই নিভৃতে। রোগ-শোক, জরাব্যাধির সাথে রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছিলেন অনেকটা উপেক্ষিত।
শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী। ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো তিনি ছিলেন তাদেরই একজন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শাজাহান সিরাজ ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেই সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরে তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র-রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি দুইবার করটিয়া সা’দাত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ (যার অন্য নাম নিউক্লিয়াস) এর সক্রিয় কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।
ষাটের দশকে শাজাহান সিরাজ ছাত্রলীগের মাধ্যরমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হন জাসদের সংগঠক। বাম ঘরানা থেকে রাজনীতির জটিল অঙ্গনে উল্টো পথে হেঁটে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে অনেক দিন রাজনীতিতে থেকে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের আগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি। তখন যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হত তারই একজন শাহজাহান সিরাজ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘ছাত্র আন্দোলনের নিউক্লিয়াস’র পক্ষে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। ওই দিন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান ‘চার খলিফা’ র আরেকজন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব। ‘চার খলিফা’র অন্য‘ দুজন হলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী এবং ডাকসুর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন।
স্বাধীনতার পর রব-সিরাজের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ভাঙন থেকে জাসদ গঠিত হলে সেই দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শাজাহান সিরাজ। তখন তাকে কিছু দিন কারাগারেও থাকতে হয়েছিল। পরে জাসদ ভাঙতে ভাঙতে কয়েকটি ভাগ হলে একটি অংশের নেতৃত্ব ধরে রাখেন শাজাহান সিরাজ। ১৯৯৫ সালে দল নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী হন তিনি।
১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেওয়া শাজাহান সিরাজ ওই আসন থেকে বেশ কয়েকবার ওই এলাকা থেকে সংসদ সদস্যা নির্বাচিত হন। টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের দুই বার ভিপি ছিলেন তিনি।
শাজাহান সিরাজের পিতার নাম আব্দুল গণি মিয়া এবং মাতা রহিমা বেগম। এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী, সাবেক ছাত্রনেত্রী রাবেয়া সিরাজের সঙ্গে ১৯৭২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাহজাহান সিরাজ। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ একজন শিক্ষিকা এবং রাজনীতিবিদ।