আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য বন্যায় দিশেহারা পাবনার তাঁতীরা, সর্বস্বান্ত হবার উপক্রম

বন্যায় দিশেহারা পাবনার তাঁতীরা, সর্বস্বান্ত হবার উপক্রম


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৭, ২০২০ , ১১:২১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


পাবনা প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন ও সাধারণ ছুটিতে বেচাকেনা হয়নি পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উল ফিতরের মৌসুমে। সারা বছরের পুঁজি হারিয়ে কোন মতে ঈদ উল আযহায় লুঙ্গি বিক্রির প্রস্ততিতে ব্যস্ত ছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার তাঁতীরা। ঠিক এমন সময়েই ‘মড়ার উপর খড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে সর্বনাশা বন্যা। একের পর এক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে তাদের। তাঁতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় তাদের তাঁতযন্ত্রই শুধু নষ্ট হয়নি, ঋণের টাকায় কেনা রং-সুতাও নষ্ট হয়েছে।

ভুক্তভোগী তাঁতীরা জানান, করোনায় কাজ না থাকায় মাস তিনেক প্রায় সবাই তাঁত কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। কোরবানীর হাটকে সামনে রেখে সপ্তাহ তিনেক আগে ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা ছিল তাদের। এনজিও ঋণ ও ধার-দেনা করে কোনমতে সবাই কমবেশি তাঁত চালু করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে বন্যার পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার মুজিববাঁধ তীরের তাঁতপল্লীর গ্রামগুলোর তাঁতঘরসহ বাড়ির বসতঘরগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আত্মীয় বাড়িসহ অন্যের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে এসব পরিবারের লোকজন।

শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় বেড়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে মালদাপাড়া, পেঁচাকোলা, উত্তর পেঁচাকোলা, রাকশা, সাফুল্যাপাড়া, বাটিয়াখরা, নেওলাইপাড়া, সোনাপদ্মা, রূপপুর, খানপুরাসহ তাঁত সমৃদ্ধ অন্তত ১৫টি গ্রাম রয়েছে। করোনার কারণে গ্রামগুলোর ১০ হাজার তাঁতশ্রমিক এমনিতেই ধুঁকছিলেন। বন্যা তাদের পথে বসিয়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বসতঘরগুলোও। সবচেয়ে বড় কথা হলো পানিতে ডুবে থাকায় তাঁতযন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন তাঁরা জীবন জীবিকা নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন। তাঁতঘর, বসতঘর ও অকেজো তাঁত অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া ও মেরামতের চিন্তায় রয়েছেন তারা। এর সঙ্গে খাবার যোগাড়ের চিন্তা তো আছেই।

পেঁচাকোলা গ্রামের তাঁতপল্লীতে, হাতেগোনা দশ বারোটি তাঁত কারখানা ছাড়া প্রায় সবকটি কারখানায় ঢুকেছে বন্যার পানি। কারখানায় হাঁটু পানির মধ্যেই কেউ কেউ লুঙ্গি তৈরীর কাজ চালানোর চেষ্টা করছেন। তবে, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যেই এসব কারখানা ডুবে যাবে বলে জানান তাঁতিরা।

সোলেমান শেখ নামের একজন তাঁতী জানান, ‘করোনার জন্নি এমনিতেই আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়া গেছিল। শেষ সম্বল তাঁত দুইখান নিয়্যা বাঁচার আশা করিছিল্যাম। কিন্তু বন্যায় সেই আশাও শেষ হয়া গেল।’

নেওলাইপাড়া গ্রামের রজব আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঈদের হাটের কথা চিন্তা করে কয় দিন আমার পাঁচ খান তাঁত থেকে লুঙ্গি বুনাইয়ে বেড়া ও শাহজাদপুর বিক্রি করলাম। এহনতো তাঁত ঘরই ডুবে গেছে। ধার করে অনেক টাকার সুতা রং কিনিছিলাম সব শেষ। বউ পোলাপান নিয়ে অন্যের বাড়িতে রইছি একেবারে সর্বস্বান্ত হয়া গ্যালাম।’

হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিল্টু মিয়া বলেন, আমার ৪নং ওয়ার্ডসহ ৫নং ওয়ার্ডের পেঁচাকোলা ও নতুন পেঁচাকোলা গ্রামে অন্তত পাঁচ-সাতশ তাঁতি পরিবার বন্যাদুর্গত। উপজেলায় অন্যান্য গ্রামে আরও হাজারের বেশি তাঁতিদের একই অবস্থা। করোনার পর বন্যার আঘাতে তাঁতিরা নিঃস্ব হওয়ার পথে। এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা দেয়া হয়নি বলেও তিনি জানান।

ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, বন্যাকবলিত তাঁতীদের বিষয়টি আমি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখব। বন্যাকবলিতদের জন্য আলাদা কোনো ত্রাণ সহায়তা না এলেও ঈদ উপলক্ষে উপজেলায় বড় ধরনের ত্রাণ সহায়তা (ভিজিএফ) এর চাউল এসেছে। এসব ত্রাণ বিতরণে অসহায় তাঁতীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।