আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// হাটে গরুর সংকট : গরু নিয়ে টানাটানি

হাটে গরুর সংকট : গরু নিয়ে টানাটানি


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৩১, ২০২০ , ১:০৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


মোস্তাফিজুর রহমান : বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই হঠাৎই রাজধানীর হাটগুলো প্রায় গরু শূন্য হয়ে পড়েছে। গরুর চেয়ে ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে বেশি। এ যেন নাটকের দৃশ্যকেও হার মানিয়েছে। অনেক ক্রেতাকেই বলতে শোনা গেছে অধিক দামের আশায় গরুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে অনেক ক্রেতাকে দেখা গেলেও গরু সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। বলা চলে গরু শূন্য হাট। ক্রেতাদের তীব্র চাপ থাকলেও হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা ছিল খুবই কম। যে কয়েকটি গরু ছিল তা নিয়ে রীতিমতো ক্রেতাদের মাঝে ছিল কাড়াকাড়ি। দাম কোনো ব্যাপার ছিল না গরু পাওয়াটাই ছিল সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই কে গরুর রশি ধরতে পারেন তাই নিয়ে ছিল প্রতিযোগিতা। রাজধানীর আফতাবনগর, মেরাদিয়া, খিলগাঁও রেলগেট, জুরাইন ও গাবতলীসহ বেশ কয়েকটি পশুর হাটে এই চিত্র দেখা গেছে।

অনেক ক্রেতাকে বলতে শোনা গেছে কোরবানী গরু কেনা নিয়েও আমরা বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি যার ফল এটা। কারণ পশু কোরবানী দেব আল্লাহে রাজি খুশি করার জন্য তাতেও আমরা সস্তার চিন্তা করি। মনে করি ঈদের আগে দিনর পানির দামে গরু যাবে। তাই ওই দিনকেই পশু কেনার জন্য বেছে নেন অনেকেই। যে কারণে এমনটা হয়েছে।

এদিকে, গত বুধবারও গরু  বিক্রেতারা ছিল বেশ চিন্তায়। একদিকে দেশের অধিকাংশ এলাকায় বন্যার পানিতে বেহাল দশায় আছে খামারিরা তার ওপর বাজারে বিক্রির জন্য আনা গরুও যদি  ফিরিয়ে নিতে হয় তবে তা হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। অনেক গরু মহামারি করোনার কারণে বিক্রি নাও হতে পারে এই আতঙ্কে বিক্রেতারা কম দামে গরু ছেড়ে দিয়েছেন। আফতাফ নগর গরুর হাটে সৈকত নামে একজন ব্যবসায়ী ২৪টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি জানালেন সব ব্যাপারি ও খামারির চেহারায় গরু বিক্রি না হওয়ার চাপা আতঙ্ক। আমিও  ভয়ে আছি। মহামারি করোনার কারণে যদি গরু বিক্রি না হয় তা হলে ফেরত নিতে আবার টাকা লাগবে। এতোগুলো গরুকে খাওয়াতেও অনেক খরচ। তাই কোনোটিতে সামান্য লাভ কোনোটিতে লাভ না করে লসেই গরু ছেড়ে দিয়েছি। তবে আল্লার ওপর ভরসা করে শেষ দিন পর্যন্ত ৮টি গরু রেখে দিলাম আল্লাহ যা করেন তাই হবে। ওই ব্যবসায়ীর মুখের হাসিই বলে দেয় ৮টি গরু থেকে তিনি কি পরিমান লাভ করেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় দাম একটু কম। তবে তারা খুশিমুখেই বিক্রি করেছেন।

এদিকে রাজধানীর আফতাবনগর গরুর হাট থেকে গতকাল দুপুরে গরু কিনেছেন মো. মাকসুদুর রহমান গাজী ও মো. মোনির হোসেন। তারা জানালেন, ‘আগে আগে গরু কিনলাম। কোনো ঝুঁকি নিলাম না। চাঁদের রাতে অনেক সময় দাম পড়ে যায়। ব্যাপারিদের দুঃখ বেড়ে যায়। এটা ভালো লাগে না। আবার গরুর টান পড়ে গেলে আরেক যন্ত্রণা। তারা বললেন, যে গরু ৭৩ হাজার টাকায় কিনেছি সেই মানের গরু দেখলাম আজ কেউ ৬৫-থেকে ৭০ হাজার টাকায় কিনেছেন। এবার হাটে দামের কোনো আগামাথা নেই।’

এদিকে রামপুরা উলনের শিমুল নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা  জানালেন বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ৮৫ হাজার টাকা আফতাবনগর বাজার থেকে গরু কিনেছেন তিনি। যা আগের দিন ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে অবশ্য শিমুলের আফসোস নেই। তিনি জানান এবার গরু রাখা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম। তাই আগেই নিয়ত করেছিলাম ঈদের আগের রাতেই গরু কিনব দাম কম বেশি যাই হোক।

অন্যদিকে, একই এলাকার জাহিদ নামের একজন জানালেন ভেবেছিলাম গরুর দাম যদি ঈদের আগের দিন কমে যায় তা হলে ছেলের বায়না পূরন করবো। মানে তিনিও দু’জনে মিলে একটি গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আর গরু কেনা হয়নি। এ নিয়ে তিনি অবশ্য হতাশা প্রকাশ করেছেন। গরুর মাংসও কেনা হয়নি। তিনি জানান গত দুদিন আগেও বাজারে ৪৫০ টাকা কেজি দরে মাংস কেনার সুযোগ হয়েছিল তার। আজ  দেখেন যে তা বেড়ে ৭০০ টাকায় ঠেকেছে। তাকেই আবার বলতে  শোনা যায় একেই বলে কপাল।