করোনার ভ্যাকসিন যাতে সবাই একইসঙ্গে পায়
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ , ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবন সম্ভব হলে তা সব দেশের মানুষের হাতে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও এ বিশ্বকে নিতে হবে। আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সকল দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময় মত এবং একইসঙ্গে পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। শনিবার রাত সোয়া ৮টায় ভার্চুয়াল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সবার ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি।
তিনি বলেন, এই ভাইরাস (কোভিড-১৯) আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি আর্থনীতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে বাংলাদেশে আমরা প্রথম থেকেই “জীবন ও জীবিকা” দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছি।
তিনি বলেন, দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা প্রতি বছর প্রায় ৩৯ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করি। এ ছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিসহ অন্যদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ভাতার প্রচলন করেছি যার মাধ্যমে প্রায় ৯.১ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন ‘ভার্চুয়ালি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে তার ভাষণটি দিয়েছেন ধারণ করা ভিডিওর মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। আমরা ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির জন্য এ বছরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছর আমরা আমাদের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর জীবন, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং সাফল্য আমাদের কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেমন সাহস যোগায়, তেমনি সঙ্কটের উত্তরণ ঘটিয়ে নুতন দিনের আশার সঞ্চার করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে সকল বঞ্চিত ও উন্নয়নকামী দেশ ও মানুষের পক্ষ হতে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার পিতা এবং বাঙালি জাতির পিতা, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার মা, আমার তিন ভাই, দুই ভাতৃবধূসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে। আমরা দুই বোন দেশের বাইরে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। শরণার্থী হিসেবে আমাদের ৬ বছর দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে।
সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’, এই নীতিবাক্য আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র। এ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে নিয়মিত অবদান রেখে চলেছে। মহামারীকালে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মত বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এ বিষয়গুলোর মোকাবেলা করতে পারি। শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে আমাদের শান্তিরক্ষীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম দায়িত্ব।
শান্তির প্রতি অবিচল থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। মহামারীর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী বিনির্মাণে বৈশ্বিক আকাক্সক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অবিচল। সে বিবেচনা থেকে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশসমূহের কার্যক্রমকে আমরা জোর সমর্থন জানাই।
তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কাজে লাগানো প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এই আপদকালীন, উত্তরণকাল ও উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।