বাফুফে নির্বাচন আজ
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ৩, ২০২০ , ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: স্পোর্টস
দিনের শেষে ডেস্ক : সব অপেক্ষার প্রহর শেষ। আজ শনিবার (৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন। সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতি ও সদস্যসহ মোট ২১ টি পদের জন্য মনোনয়নপত্র তুলেছেন ৪৭ জন প্রার্থী।
রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে কাল দুপুর ২টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আগামী চার বছরের জন্য ১৩৯ জন কাউন্সিলর তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ঠিক করবেন।
নির্বাচনে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদের বিপক্ষে লড়বে শেখ মোহাম্মদ আসলামের নেতৃত্বে থাকা সমন্বয় পরিষদ। তবে সম্মিলিত পরিষদের ২১ সদস্যের বিপরীতে ১৯ সদস্য দিয়েছে সমন্বয় পরিষদ। সভাপতি ও এক সহসভাপতি পদে প্রার্থী দিতে পারেনি সমন্বয় পরিষদ।
সভাপতি পদে সালাউদ্দিনের বিপক্ষে এককভাবে লড়বেন শফিকুল ইসলাম মানিক। গত ১২ বছর বাফুফের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা বাদল রায়েরও একই পর্দে নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নাম প্রত্যাহার না করায় ভোটের ব্যালটে নাম থাকবে বাদল রায়ের। তাই সভাপতি পদের লড়াইয়ে নাম আছে কাজী সালাউদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মানিক ও বাদল রায়ের। কিন্তু মূল মঞ্চের লড়াইটা হতে যাচ্ছে মানিক বনাম সালাউদ্দিনের।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাফুফে নির্বাচনে থাকতে পারছেন না ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার কোনো প্রতিনিধি। তাই নির্বাচন পর্যপক্ষণের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) যুগ্ম সচিব তৌহিদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবে এই সেল। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনী কেন্দ্রে মানতে হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা।
ফুটবল উন্নয়নে দুটি প্যানেলের প্রতিশ্রুতি একই সূত্রে গাঁথা। সম্মিলিত পরিষদ নিঃসন্দেহে শক্তিশালী প্যানেল। নিজের পরিষদ নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৬টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সালাউদ্দিন। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশকে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৫০-এর মধ্যে নিয়ে আসা।
অবশ্য এর আগেও বাংলাদেশকে ফিফা বিশ্বকাপ খেলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। কিন্তু বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, উল্টো ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাঁর সময়েই বেশি অবনমন হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের। এ ছাড়া ইশতেহারে জাতীয় ফুটবল দল, ঘরোয়া ফুটবল, নারী ফুটবল, উন্নয়ন প্রকল্প ও বিভিন্ন টেকনিক্যাল দিকগুলোর উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন সালাউদ্দিন। পাশাপাশি বাফুফের দুটি টার্ফের নতুন করে সংস্কার, মিডিয়া সেন্টার নির্মাণ ও বাফুফে ভবনে আধুনিক জিম স্থাপনসহ লম্বা ঘোষণা দিয়েছেন সালাউদ্দিন।
অন্যদিকে সম্মিলিত পরিষদের বিপরীতে ১৯ জনের দল নিয়ে লড়বে সমন্বয় পরিষদ। নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৪ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে তারা। সমন্বয় পরিষদের এই ইশতেহারে আছে ফুটবলে ১২ বছর মেয়াদি দীর্ঘ পরিকল্পনা। জেলা ও উপজেলায় লিগ, বয়সভিত্তিক ফুটবল, সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা কাপ নিয়মিত আয়োজন করা। আর পেশাদার ফুটবল লিগকে ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা তাদের। প্রতি জেলায়শহীদ শেখ রাসেলের নামে জাতীয় ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন, আন্তস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় সমন্বয় পরিষদ।
এ ছাড়া ক্লাবগুলোকে আর্থিক সাহায্য, করপোরেট লিগ আয়োজন, জাতীয় দলের জন্য চার, আট ও ১২ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ও খেলোয়াড়দের ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করতে চায় তারা। আগামী চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে সাফের শিরোপা প্রত্যাশী দল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য থাকবে এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় সমন্বয় পরিষদ। নারী ফুটবল নিয়েও রয়েছে তাদের আলাদা পরিকল্পনা।
সভাপতি পদে লড়তে যাওয়া মানিকের প্রতিশ্রুতি ২১টি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ২০৩৩ সালে শক্তিশালী অলিম্পিক দল গড়ে অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। নির্বাচনে জিততে পারলে জেলা ফুটবল ও পাইওনিয়ার লিগ থেকে প্রিমিয়ার পর্যন্ত লিগ টুর্নামেন্টকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আয়োজন করার লক্ষ্য তাঁর। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু-তনয় শেখ জামালের নামে প্রতিবছর অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট আয়োজন করা এবং পাতানো খেলা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন মানিক।
এদের মধ্যে থেকে আগামী চার বছরের জন্য বাফুফের অভিভাবক নির্ধারণ করবেন ১৩৯ জন সদস্য। নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের মূল চাবিকাঠি জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল সংস্থার কাছে। ১৩৯টি ভোটের ৭২ ভোটই তাদের দখলে। সেখানে রাজধানীর ক্লাবগুলোর ভোট ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোট ছয়টি। শিক্ষাবোর্ডের ভোট রয়েছে পাঁচটি। বাকি একটি করে ভোট ফুটবল কোচেস অ্যাসোসিয়েশন, রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন এবং মহিলা ক্রীড়া সংস্থার। তাই বাফুফের চেয়ারে কে বসবেন সেটা নির্ধারণের মূল ভূমিকা রাখবে জেলা ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
দুটি পরিষদেরই লক্ষ্য বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু, আপাতত ভোটের মঞ্চে এগিয়ে আছে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে থাকা সম্মিলিত পরিষদ। প্রচারেও এগিয়ে ছিল তারা। গত কয়েকদিন দফায় দফায় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করেছে তারা। সবমিলিয়ে এগিয়ে আছে সম্মিলিত পরিষদ। তিনবারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে হেভিওয়েট প্রার্থী—তাদের বিপক্ষে সমন্বয় পরিষদ কিংবা শফিকুল ইসলাম মানিকের সফলতা আসে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষায় ফুটবল ভক্তরা।