আজকের দিন তারিখ ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য এটিএম বুথের সফ্‌টওয়্যারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ

এটিএম বুথের সফ্‌টওয়্যারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৭, ২০২১ , ১২:৫৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের ইলেকট্রনিক জার্নাল পরিবর্তন করে দুই কোটি ৫৭ লাখ এক হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। আর এই ঘটনা ঘটিয়েছেন ব্যাংকের এডিসি ডিভিশনের (ঢাকা) সিনিয়র অফিসার মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে তার স্ত্রীসহ অন্যদের মাধ্যমে এটিএম বুথে লেনদেন করাতেন। বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি এটিএম কার্ড বানিয়ে সহযোগীদের সরবরাহ করতেন। এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করিয়ে লেনদেনের তথ্য মুছে দিতেন কার্ড থেকে। ব্যবহারকারীরা ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে টাকা তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ করতেন। লেনদেনের তথ্য না থাকায় ব্যাংক থেকে ওই অ্যাকাউন্টের টাকা আবারো সমন্বয় করা হতো। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের সঙ্গে জালিয়াতি করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।
তবে রেহাই পাননি। অভিনব কায়দায় এই জালিয়াতির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান ওরফে মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের মূল হোতা মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রীসহ অন্যান্য গ্রেপ্তারকৃতদের দিয়ে এটিএম বুথে লেনদেন করাতেন। কৌশলে বিভিন্ন এটিএম’র ইলেকট্রনিক জার্নাল পরিবর্তন করে ৬৩৭ টি একাউন্টের মাধ্যমে এক হাজার ৩৬৩ টি লেনদেন করিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসাদুজ্জামান আসাদ বিস্‌মিল্লাহ্‌ বিডি এন্টারপ্রাইজ নামে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এজেন্টশিপ নেয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বহুল শ্রমিক সংবলিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের স্যালারি একাউন্ট করার কথা বলে তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে। ডিবিবিএল এজেন্ট কর্তৃক আবেদনকৃত একাউন্ট ও এটিএম কার্ডসমূহ তৈরি হওয়ার পর গ্রাহকের নিকট পাঠানোর উদ্দেশে স্ব-স্ব এজেন্টের নিকট হস্তান্তর করে। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃত আসাদ কার্ডগুলো তাদের অজান্তে অপর গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন বাবুর নিকট টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করে। আল আমিন বাবু সংগৃহীত কার্ডগুলোতে দশ থেকে বিশ হাজার টাকা করে ক্রেডিট করে। আল আমিন বাবু উক্ত টাকা এটিএম হতে ডেবিট করার সময় চক্রের মূল শাহারুজ্জামান ওরফে রনি এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টাকা উত্তোলনের সময় এটিএম বাবু কর্তৃক একাউন্টের বিপরীতে যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সংরক্ষণ সার্ভারে যাওয়ার আগে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার সেটি পরিবর্তন করে দেন। অভিযুক্ত শাহারুজ্জামান টাকা উত্তোলনের পূর্ব মুহূর্তে জার্নাল সংরক্ষণ সার্ভারের সঙ্গে ইএসকিউ এটিএম মনিটরিং সফ্‌টওয়্যার-এর মাধ্যমে যে এটিএম বুথ সমূহ পরিচালিত হয় সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সফ্‌টওয়্যারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এটিএম বুথের টাকা উত্তোলনের সময় যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সার্ভারে জমা হয় না।
ডিবি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও জানান, অভিযুক্ত শাহারুজ্জামান ‘সাকসেসফুল’ মেসেজকে ‘আনসাকসেসফুল’ মেসেজে রূপান্তরিত করার ফলে উক্ত মেসেজ পরবর্তীতে জার্নাল সার্ভারে গেলেও তা আর সাকসেসফুল মেসেজ হিসেবে গণ্য হয় না। বুথ থেকে টাকা উত্তোলিত হওয়ার পরও মেসেজ আনসাকসেসফুল দেখায়। গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন বাবু পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করে যে, সে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সময় তার ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে কিন্তু টাকা হাতে পায় নাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের দায়িত্বরত অফিসার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের অফিসার যখন দেখেন যে, টাকা উত্তোলনের জন্য কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিন্তু জার্নালটি ‘আনসাকসেসফুল’ তখন একাউন্টে ব্যালেন্স সমন্বয় করে দেন। শাহারুজ্জামান ওরফে রনি দেশের বাহিরে আত্মগোপন করায় তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে বলে জানান গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।