পুঁজিবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৮, ২০২১ , ১২:৩১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : শেষ পর্যন্ত আগামী অর্থবছরেও পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংক ডিপোজিট ও সঞ্চয়পত্রেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখবে সরকার। তবে কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে কর হার বাড়তে পারে। পহেলা জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া আগামী অর্থবছরে উৎপাদন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে বিশেষ প্যাকেজের প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার। সেক্ষেত্রে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এ সুযোগ রাখা হচ্ছে। করোনার কারণে নতুন বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। এছাড়া আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির পরিসর বাড়ানো সরকারের লক্ষ্য। অন্যদিকে, রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ আছে সরকারের সামনে। সামগ্রিক বিবেচনায় কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ রাখার বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা সায় দিয়েছেন। অর্থ বিল পাসের সময় অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুবিধা যুক্ত হতে পারে। আগামী ২৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থ বিল পাস হবে।
উল্লেখ্য, সমাপ্য ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশেষ সুবিধায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার। এজন্য অর্থ আইন-২০২০-এ দুটি ধারা সংযোজন করা হয়। অপ্রদর্শিত জমি ও ফ্ল্যাট কিনে বর্গমিটারপ্রতি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। আর সঞ্চয়পত্র এবং যে কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে এমনকি নগদ টাকাও মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থ প্রদর্শন করলে কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না। অন্যদিকে, একই হারে কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সাদা করা যাচ্ছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ ধারায় শুধু কর হার বাড়িয়ে বাকিটা অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। কর হার ২৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করে আসছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকার কালো টাকার মালিকদের প্রণোদনামূলক সুবিধা দিয়েছে। এসে সৎ করদাতারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হন। আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোনো কিছু বলেননি। এমনকি অর্থবিল-২০২১-এ কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে গত মে মাসে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। যতদিন অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন এ সুযোগ অব্যাহত রাখবে সরকার। মুস্তফা কামাল মনে করেন, দেশের কিছু ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অর্থ অপ্রদর্শিত হয়ে পড়ে। এসব অপ্রদর্শিত অর্থ আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে আনতে এ সুযোগ রাখা দরকার। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরের গত মে পর্যন্ত ১০ হাজার ৪০৪ জন করদাতা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। এসব ব্যক্তি মোট ১৪ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা সাদা করেছেন। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫-৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে মোট ১৪ হাজার ৫৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা সাদা করেছেন কালো টাকার মালিকরা।
চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ কালো টাকা সাদা হয়েছে তার মধ্যে পুঁজিবাজারে ২৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও আবাসন খাতে দুই হাজার ৫১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা সাদা হয়েছে। বাকি ১১ হাজার ৬৬৩ কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা সাদা হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা প্রধানত নগদ টাকা সাদা করেছেন। এসব টাকা সাদা করায় এনবিআর এক হাজার ৪৪৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। বিপুল পরিমাণে কালো টাকা সাদা হওয়াকে এনবিআর করদাতাদের ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া হিসেবে উল্লেখ করেছে