করোনায় মৃত্যু আরও বাড়বে!
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২, ২০২১ , ১:৫১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (৩০ জুন সকাল আটটা থেকে ১ জুলাই সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চারদিনের ব্যবধানে দেশে করোনা মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ এই মৃত্যু দেখলো বাংলাদেশ। এর আগে গত ২৭ জুন সর্বোচ্চ ১১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদফতর। তবে গত টানা পাঁচদিন ধরেই করোনাতে একশোর উপরে মানুষ মারা যাচ্ছেন। এর আগে ৩০ জুন ১১৫ জন, ২৯ জুন ১১২ জন, আর ২৮ জুন মারা যায় ১০৪ জন। গত বছরের ৮ মার্চে প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ঠিক ১০ দিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগী মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনায় মারা গেলেন ১৪ হাজার ৬৪৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরে তথ্যানুযায়ী, মৃত্যু সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজারে আসতে অর্থাৎ সর্বশেষ এক হাজার মৃত্যু হতে সময় লেগেছে মাত্র ১৫ দিন। আন্তর্জাতিক জরিপ প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডোমিটারস জানায়, করোনায় মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৮তম। এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কোভিড-১৯ রোগের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যে কারণে রোগীর মৃত্যুও হচ্ছে দ্রুত। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেড়েছে অনেক বেশি তীব্রতা নিয়ে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু আরও বাড়বে। কারণ করোনার সুপ্তিকাল (ইনকিউবিশন পিরিয়ড) অর্থাৎ লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পেতে সাধারণত ১৪ দিন বা দুই সপ্তাহ এবং মৃত্যুর সময় সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার তিন সপ্তাহ ধরা হয়, যদিও মৃত্যু আরও আগে হতে পারে। সে হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে রোগী শনাক্তের যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তাতে করে সামনে মৃত্যু আরও বাড়বে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে জটিল অবস্থাতে গিয়েছেন গত ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে। আবার অনেকেরই জটিলতা তৈরি হয়েছে ৫ দিনে, কারও ১০ দিনে, কারও ১২ দিনে। গত তিন সপ্তাহের মধ্যেই এসব রোগীদের অবস্থা জটিল হয়েছে। সে হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া আট হাজার মানুষের হিসাব ধরে আগামী দিনগুলোতে মৃত্যু অবশ্যই বাড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সুপ্তিকাল ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষ্মণ উপসর্গ প্রকাশ পায়। আর লক্ষ্মণ উপসর্গ প্রকাশ পাওয়া থেকে শুরু করে ১৫ দিনের পর থেকে রোগীদের অবস্থা জটিল হয়ে শেষে মৃত্যু হয়। সে হিসেবে গত তিন সপ্তাহ থেকে রোগী শনাক্ত ধরে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু আরও বাড়বে। যারা আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে এক দশমিক ৫ থেকে দুই শতাংশের মৃত্যু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহের প্রতিদিনের শনাক্তের ভেতর থেকেই মৃত্যু সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে এবং এটা অবধারিত। আমাদের মৃত্যু আগেরবারের চেয়ে আনুপাতিক হারে বেশি হবে এবং সেজন্যই আজকের ( ১ জুলাই) রেকর্ড শেষ রেকর্ড নয়, আমাদের হয়তো আরও বেশকিছু দিন অধিকহারে মৃত্যু দেখতে হতে পারে।
রোগী শনাক্ত যত বাড়বে, মৃত্যু ততই বাড়বে বলে উল্লেখ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, রোগী ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি হয়ে পরেছে। সঠিকভাবে রোগী ম্যানেজমেন্ট না করতে পারলে মৃত্যু বাড়বে। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। গত কয়েকদিনের রোগী শনাক্তের হার ধরে মৃত্যুর হার সামনে আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, আজ যে মৃত্যু দেখা যাচ্ছে সেটা গত ২৪ ঘণ্টার নয়, এটা গত কয়েকদিনের গড় হিসাব। কেউ আক্রান্ত হবার ১০ দিনের মাথায়, ১১ দিনের, ১২ দিনের বা কেউ ১৫ দিনের মাথায় মারা যান। সে হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে যে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি তাতে করে আজ থেকে দেড়-দুই সপ্তাহ পরে মৃত্যু আরও বাড়বে।