টিকাকেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : টিকাদানের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে করোনা টিকার কার্ড হাতে নিয়ে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের টিকা কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। ভোর থেকেই ২৫ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষেরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের মাঝে টিকার জন্য যতটা উৎসাহ দেখা গেছে সেখানে করোনা থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা ছিল অনুপস্থিত। রবিবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে সকাল ৯টা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল ৬টা থেকেই মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে টিকা নিতে পারেননি। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রম বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে।
সারাদেশে ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে শনিবার (৭ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যা চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে ৩২ হাজার ৭০৬ জন কর্মী ও ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।
টিকার জন্য নিবন্ধনের দুই দিন পরই এসএমএস পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদি ইউনিয়নের বাসিন্দা শ্যামলি মজুমদার (২৩)। গতকাল রূপসদি বৃন্দাবন উচ্চবিদ্যালয়ের টিকাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন টিকার জন্য। কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর পরপরই শ্যামলি শুনলেন এক তরুণ হ্যান্ড মাইকে বলছেন, ‘যাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে তারা ১৪ তারিখের পর আসবেন। আজকে আমরা প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা দিচ্ছি। দয়া করে সবাই লাইনে দাঁড়ান।’
লাইন থেকে সরে আসেন শ্যামলিসহ আরও অনেকে যাদের বয়স ২৫ বছরের কম। তবে লাইনের পেছনে থাকা ষাটোর্ধ্ব বিমলা বালাকে কয়েকজন এগিয়ে যাবার জন্য সুযোগ করে দেন। খুব কম সময়েই টিকা নিয়ে বাড়ি চলে যান বিমলা। অনেকে টিকা না পেয়ে চলে গেছেন। ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিতে টিকা দেয়া হয়েছে। সেখানেও মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ২৫ বছরের কম বয়সিদের লাইনে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি সেখানে। সেখানেও জানানো হয় ২৫ বছরের কম বয়সিদের ১৪ তারিখের পর টিকা দেওয়া হবে। শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একটি দল সেখানে মাইক হাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা টিকা বুথের সামনে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে কার্ড লিখে দেন। সেই কার্ড নিয়ে আবার টিকা গ্রহীতাদের লাইন দাঁড়াতে হয়েছে।
কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক জানান, গ্রামগঞ্জের অসংখ্য মানুষ টিকা নিতে এসেছে। আমরা মনে করি, এই গণটিকাদান কর্মসূচি মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনার তৈরি করবে। আমরা টিকা কর্মসূচি শুরু করলাম। যদি কোনো এলাকায় আজকে শুরু করা না যায়, তাহলে আমরা সেখানে কালকে (রবিবার) করব। মানুষকে বাদ দেয়া হবে না। ছয় দিনব্যাপী এই কর্মসূচি সারাদেশের আনাচে-কানাচে আমরা ছড়িয়ে দেব।
১২ তরিখ পর্যন্ত এই কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয় ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয় দিনের বিশেষ ‘ক্যাম্পেইনের’ টিকাদান আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। ৭ আগস্ট দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। ৮ ও ৯ আগস্ট ইউনিয়নের যেসব ওয়ার্ডে ৭ তারিখ নিয়মিত টিকাদান চালু ছিল, সেসব ওয়ার্ডে এবং পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে টিকা দেয়া হবে। ৭ থেকে ৯ আগস্ট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান চলবে। ৮ ও ৯ আগস্ট দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় টিকাদান হবে। ১০ থেকে ১২ আগস্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। সারাদেশে চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোশেন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে চলবে এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি। ১৫ হাজারের বেশি টিকাদান কেন্দ্রে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী এই কর্মসূচিতে যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।