আজকের দিন তারিখ ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলারডুবি: এত প্রাণহানির দায়ভার কে নেবে?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলারডুবি: এত প্রাণহানির দায়ভার কে নেবে?


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


আবারো ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটল। গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার একটি বিলে বালুবোঝাই ট্রলারের ধাক্কায় যাত্রীবোঝাই ট্রলার ডুবে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। অর্ধশতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রতিক‚ল আবহাওয়া বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এই ট্রলার ডুবেনি, ঘটেছে আরেকটি ট্রলারের ধাক্কায়। এটাকে দুর্ঘটনা তথা দৈব-দুর্বিপাক বলার কোনো সুযোগ আছে কি? নৌচালনা সংক্রান্ত বিধানের লঙ্ঘন, সর্বোপরি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীন আচরণের মাধ্যমে সংঘটিত একটি হত্যাকাÐ এটি। যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের কি কোনো সান্ত¡না পাওয়ার সুযোগ আছে? চরম শোকাবহ এই ব্যাপক প্রাণহানির জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারাধীন করা ও উপযুক্ত শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে নৌপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনা হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামবে না, থামবে না মৃত্যু, স্বজনের কান্না। জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকালে বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর খেয়া ঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দবাজার খেয়া ঘাটের উদ্দেশে সর্বশেষ ট্রলারটি ছেড়ে আসে। প্রায় ২০ মিনিট পর লইস্কা বিলের ভাতের খলা নামক স্থানে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটিকে প্রচÐ বেগে ধাক্কা দেয় বালুবোঝাই একটি ট্রলার। এতে শতাধিক যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি কয়েক ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। এ সময় নারী, পুরুষ ও শিশুর চিৎকারে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অন্তত অর্ধশত মানুষ সাঁতরিয়ে পাড়ে ওঠে। ২১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশে প্রায়ই ঘটছে নৌদুর্ঘটনা। নৌদুর্ঘটনায় বোধগম্য কারণেই প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। ঘটনা ঘটার পর যথানিয়মে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখলেও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি পাওয়ার নজির তেমন দেখা যায় না। স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন। অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনাই মূলত এ দেশে নৌদুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এসব দূর করে দেশের নৌপথগুলোকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখার দাবি পুরনো। অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশে (আইএসও) লঞ্চডুবির কারণে দায়ী লঞ্চ মালিক, মাস্টার ও চালকের শাস্তির বিধান রয়েছে। এদের নিবন্ধন বাতিল, এমনকি জেল-জরিমানার কথাও উল্লেখ আছে। এছাড়া লঞ্চ জরিপকারকেরও শাস্তি, এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার বিধান আছে আইএসওতে। ১৯৭৬ সালে আইএসও প্রণীত হয়। পাঁচ দফায় এটি সংশোধনও হয়। সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু নকশা প্রণয়নকারী, এ সম্পর্কিত সনদ প্রদানকারী ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুল বা ত্রæটিজনিত কাজের শাস্তির বিধান যোগ হয়নি কোনো সংশোধনীতে। যার জন্য কোনো লঞ্চ কিংবা ট্রলার ডুবলে এবং মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও এদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। আমরা মনে করি, নৌ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, রুট পারমিটের নিয়ম চালু, ত্রæটিপূর্ণ নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সনদ দেয়া, নৌপুলিশ ও ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর করা জরুরি।