আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় নদী দখল ও দূষণ রোধ কি সম্ভব নয়?

নদী দখল ও দূষণ রোধ কি সম্ভব নয়?


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১ , ১:৪৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখল-দূষণ-বর্জ্যে মৃতপ্রায়। বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। তবে আশ্চর্যের খবর হলো, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। বুড়িগঙ্গার ৬৭টি বড় দূষণ মুখের মধ্যে ৫৬টি ঢাকা ওয়াসার। আর তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা দূষণেও শিল্পকারখানার চেয়ে পিছিয়ে নেই বিসিক, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। নদ-নদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনাকে অনেকাংশেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারে ৩ মাসের মধ্যে বহুতল ভবন, বাজার, কল-কারখানাসহ ৭৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা ছিল। তবে গত ৫ মাসে ১০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং বিভিন্ন অংশে দখল তৎপরতা চলছে। কেল্লারমোড় শ্মশানঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে নদীর অংশে গড়ে তোলা হয়েছে রিকশা ভ্যানের গ্যারেজ। প্রতিদিনই আবর্জনা ফেলে একটু একটু ভরাট করা হচ্ছে। খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ভ্যানগুলো সেখানে আবর্জনা ফেলছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই চলছে আগ্রাসী থাবায় নদ-নদী দখলবাজির দুর্বৃত্তপনা। যে কোনো নদীর পাড়ে চোখ মেলে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। অবস্থা এমনই যে, অনেক নদ-নদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। দখল ও দূষণের কারণে গত ৪ দশকে দেশের ৪০৫টি নদ-নদীর মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে যা ৪ হাজার কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। এই চিত্র বদ্বীপটির কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। এমন বাস্তবতায় গতকাল বিশ^ নদী দিবস পালিত হয়েছে। নদ-নদী-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখানে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নদ-নদী-জলাশয় রক্ষার তাগিদ প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানানো হচ্ছে। পরিবেশ সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারীরা বলছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত উপেক্ষিত হচ্ছে। সংকট কোথায়? দখল-দূষণকারীরা কি এতই শক্তিশালী যে রাষ্ট্রীয় সব উদ্যোগ তাদের কাছে অসহায়। নাকি সরকারের এ সংক্রান্ত কর্মকাÐের মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। অভাব রয়েছে সংশ্লিষ্টদের দৃঢ়তায় ও সদিচ্ছায়। আমরা দেখছি, বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নদ-নদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই তা আবার থেমেও যায়। নদ-নদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। নদী রক্ষায় শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যে মানুষদের উদ্দেশ্য করে প্রকল্প নেয়া হয় তাদের স্বার্থ আসলেই সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। নদী রক্ষায় নীতি ও আইন রয়েছে। এসব নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে। নদীকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দিতে হবে।