বাঘার আশরাফ আলীর স্ত্রী-সন্তানরা ফ্রান্সে তার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রমে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : আশরাফ আলীর সন্তানরা থাকেন ফ্রান্সে। স্ত্রীও থাকেন সেখানে। ঋণের জালে জমি বিক্রি করে নিঃস্ব এই বৃদ্ধের দিন কাটছে বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানদের সঙ্গেও তার আর কোনো যোগাযোগ হয় না। দেশে থাকা একমাত্র ছোটবোন মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনে তার খোঁজখবর রাখেন। এভাবেই কাটছে আশরাফ আলীর দিনকাল। জানা যায়, ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ২১ বছর ফ্রান্সে ছিলেন আশরাফ। কিন্তু দেশের ভালোবাসার টানে ফ্রান্স আর তার ভালো লাগে না। তাদের অমতেই দেশে চলে আসেন। দেশে এসে ইটভাটার ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু আশরাফ আলী সেই ভাটার ব্যবসায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জমিজমা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। তারপর তিনি বিভিন্ন হোটেলে কাজ করেন। বয়সের ভারে হোটেলে কাজ করতে না পেরে এখানে-সেখানে থাকতে শুরু করেন। এদিকে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে অভিমান করে তিনি আর আর দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে যাননি। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে এখন আর তার যোগাযোগ নেই। এর মধ্যেই রাজশাহীর বাঘার বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে ২০২০ সালে বিটিভিতে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সেই প্রচার দেখে নিজেই এই বৃদ্ধাশ্রমে আসেন। দেড় বছর ধরে তিনি এখানে আছেন।
আশরাফ আলী বলেন, তার বাড়ি সিলেটে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তিনি বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে নিজে লেখাপড়া করে ২১ বছর আগে ফ্রান্সে গিয়েছিলাম। পরে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে ফ্রান্সে নিয়ে যাই। তারা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি সেখান থেকে চলে এসে দেশে ইটভাটার ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস। ইটভাটার ব্যবসায় লোকসান হয়। তারপরও ছেলে-মেয়েরা ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য ডেকেছিল। আমি দেশের মায়া ছেড়ে যাইনি। তাই অভিমান করে ছেলে-মেয়েরা আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখে না। তবে আমার একটি ছোট বোন আছে, সে মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনে কথা বলে।
আমি বিভিন্ন হোটেলে কাজও করেছি। বয়সের ভারে কাজ করতে না পারায় নিরুপায় হয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট কল্যাণি শিশুসদন ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধানিকেতনে আশ্রয় নিয়েছি। আমি ভালো আছি। আশরাফ আলীর মতো আরও ৫৯ জন বৃদ্ধ রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ জন নারী বৃদ্ধ ও ১৫ জন পুরুষ বৃদ্ধ রয়েছেন।
তাদের কারও বা ছেলে-মেয়ে খোঁজ রাখে না, আবার কারও বা ছেলে মেয়ে উভয়ই না থাকায় তাদের আশ্রয় এখন বৃদ্ধাশ্রমে। এদের মধ্যে কারও বাবা নেই, কারও বা নেই মা, আবার অকালে অনেকেই হারিয়েছেন বাবা-মা দুজনকেই। একেক জনের জীবনের গল্প একেক রকম। তাদের পরিবারের কোনো খোঁজ নেই, তাদের মধ্যে কেউ পরিত্যক্তা আবার কেউ দুর্ভাগ্যক্রমে পরিবারবিছিন্ন মানুষ। তাদের পরিবার নেই, নেই আনন্দও।
বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার বলেন, নিজের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যে সহযোগিতা পাই, তা দিয়ে ছয় মাস চলে। আর ছয় মাস বিভিন্ন দোকানে বাকি রাখতে হয়। বছর শেষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে থাকতে হয়। সরকার ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা পেলে অন্তত এই ঋণ থেকে মুক্তি পেতাম।