কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করে চাল আমদানি হোক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:২৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। এর মধ্যে ১৭ লাখ টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের চাল আমদানির অনুমতি ইতিবাচক। কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করে চাল আমদানি হতে পারে। আমদানির পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। জানা গেছে, চলতি বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। বোরো উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৮ টন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এমতাবস্থায় চাল আমদানি নিয়ে কেন প্রশ্ন আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বার্ষিক জনপ্রতি চালের ব্যবহার ১৫২ কেজি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে ২০১৯ সালে দেশে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বিদেশিদের সংখ্যা যোগ করলে মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ কোটি। সেই হিসাবে দেশে মোট বার্ষিক চালের চাহিদা ২ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার টন। চালকল মালিকদের মতে, দেশে এই মুহূর্তে বিদেশিসহ জনসংখ্যা ২০ কোটি। সে হিসাবে বছরে চালের প্রয়োজন ৩ কোটি ৪ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত বার্ষিক সর্বোচ্চ চাল আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৯ লাখ টন। এ বছরও প্রায় ৩০ লাখ টন চাল আমদানি করছে সরকার। এর মধ্যে আগে এসেছে ১৩ লাখ টন। সে অনুযায়ী উৎপাদিত ধান-চাল নষ্ট হওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হলে প্রকৃতপক্ষেই চালে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করত দেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যশস্যের কৌশলগত মজুতের জন্য চাল আমদানি করা যেতে পারে। তবে সেটা কোনোভাবেই মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশের বেশি নয়। মোট আমদানির পরিমাণ মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশের বেশি হলে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়। বেশি আমদানি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে চাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তাছাড়া পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চাষ করা মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম ও আলু উৎপাদনে অষ্টম বলে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়। কিন্তু কৃষক বঞ্চিত হয় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা একটি সমন্বিত ও আধুনিক কৃষিপণ্য বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে একদিকে উৎপাদিত ফসল ও খাদ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। অন্যদিকে সেসব পণ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয় ভোক্তা তথা ক্রেতাসাধারণকে। বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়ার সময় এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ, মজুত বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার চালের আমদানি শুল্ক হ্রাস করতে পারে। কিন্তু শুল্ক হ্রাসের সেই সুযোগ নিয়ে বেসরকারি আমদানিকারকরা যাতে দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ চাল আমদানি করে কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।