সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। মন্দিরে মন্দিরে ঢাক-কাঁসর বাজা, ভক্তদের মনভরে দেবীর আরাধনা ও ভক্তিভরে অঞ্জলির মাধ্যমে শেষ হয়েছে এ উৎসব। কিন্তু সবার মাঝে একটা ভয় শঙ্কা ছিল। কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মণ্ডপগুলোতে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছিল। ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টার প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কুমিল্লায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার মন্দিরে মহাপবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন রেখে দিয়ে যে বা যারাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অস্থিরতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছে, তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। অশুভ অসুর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুভ দেবশক্তির চূড়ান্ত বিজয়ের দিন হিসেবেই দুর্গাপূজার দশমীর দিনটিকে বলা হয় ‘বিজয়া দশমী’। অসুরকুলের দম্ভ-দৌরাত্ম্য থেকে দেবকুলকে রক্ষায় মাতৃরূপী ও শক্তিরূপী দেবী দুর্গার আগমন। অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেন। অন্যায় ও অশুভকে পরাস্ত করার মাধ্যমে ন্যায় ও শুভবোধের প্রতিষ্ঠা ঘটে। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষের সংগ্রামে মর্ত্যরে মানুষকেও সাহসী করে তোলেন। দূর করে দেন যত গøানি, হিংসা-দ্বেষ, মনের দৈন্য ও কলুষ। যাবতীয় মহৎ গুণাবলির প্রতি দেবী দুর্গা মানুষকে আকৃষ্ট করেন। এটি অনুপম সম্প্রীতি চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এই সম্প্রীতিও মাঝে মাঝে অসুরের অবাঞ্ছিত কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মন্দিরে হামলা-ভাংচুর শুভবোধসম্পন্ন সব মানুষকেই লজ্জিত, আহত এবং শঙ্কিত করে। এগুলো দুঃখজনক। কোনো নিষ্ঠাবান সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু বা প্রকৃত মুসলমানের পক্ষে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন নিয়ে এমন অবমাননাকর ভূমিকা পালন করা অসম্ভব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে কারা বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের বাংলায় ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এদের শনাক্ত করা জরুরি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সুযোগসন্ধানীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। কুরআন অবমাননাকারীদের রেহাই দেয়ার সুযোগ নেই। তবে সবকিছু হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খলভাবে। ইতোমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কুরআন অবমাননাকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নেপথ্যের অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আমরা তার সুষ্ঠু তদন্ত দেখতে চাই। পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে যে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা দূরীকরণে প্রশাসনকে আরো আন্তরিকভাবে পাশে থাকতে হবে।