অবশেষে ময়লার গাড়িচালক নিয়োগে তৎপর দুই সিটি
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ২০, ২০২১ , ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : ময়লার গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজছাত্র ও প্রথম আলোর সাবেক এক কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সংস্থা দুটি দক্ষ চালক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে যারা ময়লার গাড়ি চালানো নিয়ে ফাঁকিবাজি করেছেন, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতদিন দক্ষ চালক নিয়োগে নানা আইনি জটিলতা ছিল। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর থেকে চালক নিয়োগে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে জনবল নিয়োগ কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদন বারবার সংশোধনের কারণে নিয়োগ কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। ফলে চালক সংকটের কারণে অদক্ষ ও বহিরাগত কর্মী দিয়ে ময়লা পরিবহন শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ভাগ হওয়ার ১০ বছর পর দক্ষ চালক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসি
গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তা পার হওয়ার সময় ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান (১৭) মারা যান। নাঈম নটর ডেম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এ ঘটনার পরপরই গুলিস্তান এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন নটর ডেমের ছাত্ররা। পরদিন তারা নগর ভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে গিয়ে ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ওই ময়লার গাড়িচালকের ফাঁসি চান ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানান। ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র ওই সময় জানায়, নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ময়লাবাহী গাড়িচালক হারুন অর রশীদ ডিএসসিসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন না। তার ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। তিনি মূলত সংস্থাটির একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেওয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা ছিল তার কাজ।
তারা আরও জানান, হারুনের মতো এমন আরও অর্ধশত চালক রয়েছেন, যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও পিয়ন হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত (মাস্টার রোল)। এখন তাদের গাড়ি চালানো থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহারের জন্য ৩১৭টি ভারী (ট্রাক) যান আছে। কিন্তু চালক আছেন মাত্র ৮৬ জন। বাকি গাড়ি চালান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তাদের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। ফলে সংস্থার গাড়িগুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গত ৮ ডিসেম্বর ৩২ জন চালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিএসসিসি। আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে আবেদন করা যাবে। জানতে চাইলে ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে চাকরি অভিজ্ঞতায় বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ভারী গাড়ি চালানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। এ চালকদের নিয়োগ দেওয়ার পর দক্ষ চালক সংকট কমবে।
৯ চালক বরখাস্ত
নিজের নামে বরাদ্দ হওয়া গাড়ি নিজে না চালিয়ে করপোরেশনের গাড়িচালক নন এমন ব্যক্তিকে দিয়ে অবৈধভাবে গাড়ি চালানোয় গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারী গাড়ির সাতজন এবং হালকা গাড়ির দুজন চালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে ডিএসসিসি। ওইদিন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, করপোরেশন থেকে বরাদ্দ হওয়া গাড়ি নিজে না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে চালানোয় প্রায়ই প্রাণহানিসহ জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। তাই করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত নয়টি আলাদা দপ্তর আদেশে সংশ্লিষ্ট গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর নগরের চকবাজার এলাকায় এক অনুষ্ঠানে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, চালকের যে পদগুলো খালি আছে সেগুলো পূরণের জন্য আমরা এরই মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। নিয়মিত গাড়িচালক ও ভারী গাড়িচালক নিয়োগের ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে একটি বিষয়, আমাদের জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। এ স্বল্পতা কাটিয়ে ওঠাটাই আমাদের জন্য বেশি প্রতিকূলতা। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার, বিশেষ করে জনপ্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মেয়র আরও বলেন, নাঈম হত্যার পর এ বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। প্রতিবেদনে যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের ৯ জন নিয়মিত গাড়িচালক, যারা ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে গাড়ি চালাতেন, তাদের আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছি।
ডিএনসিসি
নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈমের মৃত্যুর পরদিনই (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর পান্থপথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়িচাপায় প্রথম আলোর সাবেক কর্মী আহসান কবীর খান মারা যান। তখন সড়কে এ বিশৃঙ্খলা নিয়ে সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ডিএনসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, ওই ময়লার গাড়িচালকের নাম মো. হানিফ ওরফে ফটিক। তিনিও ডিএনসিসির নিয়োগপ্রাপ্ত চালক ছিলেন না। হানিফ মূলত ডিএনসিসির মালি। এ ঘটনার পর হানিফ দুদিন পলাতক ছিলেন। চাঁদপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এমন ঘটনার পর গত ৩০ নভেম্বর গুলশানের নগর ভবনে ডিএনসিসিতে কর্মরত পরিবহন চালকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। ওই সভায় মেয়র আতিকুল চালকদের হুঁশিয়ার করে বলেন, গাড়ি চালানোর জন্য যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত তাকেই গাড়ি চালাতে হবে। সব গাড়িতে আধুনিক জিপিএস ও ড্যাস কামেরা স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির অর্গানোগ্রামে ভারী এবং হালকা গাড়িচালক পদ রয়েছে ১৯২টি। এর মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক আছেন মাত্র ৭৩ জন। শূন্যপদ ১১৯টি। ৪৭টি পদে নিয়োগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। ৪৫টি পদে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তবে এখন ডিএনসিসিতে বর্জ্যবাহী ভারী গাড়ি আছে ২৭২টি, চালক আছেন ১৬০ জন। এসব চালকদের ১৩৬ জনই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে গাড়ি চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শিগগির চালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বর্জ্যের কোনো গাড়ি দিনে চালানো যাবে না।