আজকের দিন তারিখ ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর তরুণ প্রজন্মকে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করবে: প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর তরুণ প্রজন্মকে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করবে: প্রধানমন্ত্রী


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ৩:৪৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক :  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর (বিএমএম) থেকে তরুণ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।’ তিনি বলেন, এ জাদুঘর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি শিশুদেরও সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করবে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রান্তে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাদুঘরটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক হবে। যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ও শিশুরা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।

এ কারণেই ক্ষুদ্র পরিসরে থাকা সামরিক জাদুঘরকে বৃহৎ পরিসরে এবং আরও আকর্ষণীয় করে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের পাশে বিজয় সরণিতে তৈরির উদ্যোগ তার সরকার গ্রহণ করে। পাশাপাশি সেখানে সরকারি উপহারগুলো প্রদর্শনীর জন্য একটি তোষাখানা জাদুঘরও নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। যা নির্মাণের দায়িত্ব পায় সামরিক বাহিনী। পাশাপাশি সামরিক জাদুঘরটা যেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি সামরিক জাদুঘর হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেটাই তার আকাঙ্ক্ষা ছিল, বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে ইতিহাস রয়েছে যেমন-আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস। সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক, কাজেই সে সম্পর্কে যেন দেশের মানুষ জানতে পারে, জ্ঞানার্জন করতে পারে, তাদের কর্মকাণ্ড উপলব্ধি করতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।

জাদুঘর থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের পশ্চিম পাশে ১০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে। যেখানে স্বাধীনতার আগে ও পরে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য নির্ধারিত গ্যালারিসহ ছয়টি পৃথক অংশ রয়েছে। প্রতিটি বাহিনীর গ্যালারিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। এখানে আর্ট গ্যালারিসহ মাল্টিপারপাস এক্সিবিশন গ্যালারি, ব্রিফিং রুম, স্যুভেনির শপ, ফাস্ট এইড কর্নার, মুক্তমঞ্চ, থ্রিডি সিনেমা হল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, ভাস্কর্য, মুর‌্যাল, ক্যাফেটেরিয়া, আলোকোজ্জ্বল ঝর্ণা ও বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত প্রান্তর সবকিছু মিলে একটি চমৎকার দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর ১৯৮৭ সালে মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরে ১৯৯২ সালে ঢাকার বিজয় সরণি সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু প্ল্যানেটোরিয়ামের পশ্চিম পাশে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। জাদুঘরটি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর গৌরবময় অতীত, চ্যালেঞ্জ, অর্জন এবং অগ্রগতি সম্পর্কে দেশের জনগণকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে প্রামাণিক তথ্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রদর্শিত তথ্য গবেষণার উদ্দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিটি উন্নয়ন কাজ করতে গিয়েই তাকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সে বাধা অতিক্রম করেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন এবং আজকের এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাছাড়া দেশের মানুষের বিনোদনের জায়গা সীমিত হওয়ায় কোনও স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে তার সরকার সে বিষয়টিও মাথায় রাখে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী নভোথিয়েটারে আমাদের অনেক শিক্ষার্থীরা আসে, তারা সেখানে অনেক কিছু দেখে এবং জানতে পারে। আমাদের সামরিক জাদুঘরে এসেও দেখতে, জানতে এবং কিছু শিখতে পারবে। শিশু পার্কে তাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকছে। কাজেই সবকিছু মিলে আমাদের বিজয় সরণি বিজয়ের স্মৃতি নিয়েই চলবে। সেটাই হচ্ছে বড় কথা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি—‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ মেনেই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে তার সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও জানান সরকার প্রধান। অনুষ্ঠানে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি স্বাধীনতার পর সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে জাতির পিতার নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সে হত্যাকাণ্ডে তিনি আপনজনহারা হলেও দেশের মানুষ কিন্তু তাদের সকল সম্ভাবনাকে হারিয়ে ফেলে। এরপর একের পর এক ক্যু হয়েছে। কত সামরিক অফিসার, সৈনিককে জীবন দিতে হয়েছে। অনেক পরিবার এখনও তাদের আপনজনের খোঁজ পায়নি। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর চলেছে অত্যাচার-নির্যাতন। যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই আদর্শ থেকে দেশ একেবারেই বিচ্যুত হয়ে যায়। তিনি বলেন, পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভরভাবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়। যেন বিশ্ব দরবারে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাথা উঁচু করে চলতে পারে।

মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারিখাতগুলোকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঁচটি বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি বাংলাদেশের জন্য সেটা ছিল স্বর্ণযুগ। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে একটা আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল, তারাও জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার যে জনগণের সেবক, সেটাও আমরা প্রমাণ করেছিলাম। বারবার দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ায় তাদের প্রতি অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার ফলে আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা ২০০৮ এর নির্বাচনের ইশতেহারে আমাদের ঘোষণা ছিল। সে জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।