যে কারণে মিলছে না ট্রলার ও নিখোঁজদের সন্ধান
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১০:৫০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
নিখোঁজদের সন্ধানে নদীর দুই পাড়ে ভিড় করেন স্বজনরা। বারবার আহাজারি করে প্রিয় মানুষটিকে ফিরে পেতে চাচ্ছেন তারা। ভোর থেকে নদীর তীরে অসংখ্য সাধারণ মানুষও আসতে থাকে। তাদের মধ্যে কারও সন্তান, কারও ভাই এবং নিজের সহকর্মীর সন্ধানে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
কলেজছাত্র সাব্বির হাসানকে (১৮) না পেয়ে পাগলপ্রায় মা রাজিয়া সুলতানা। কাঁদতে কাঁদতে ভেঙেছেন গলা। গলা দিয়ে যেন শব্দও বের হতে চায় না। ভাঙা গলায় সন্ধান চেয়ে বেড়াচ্ছেন উদ্ধারকাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী, পথচারীদের কাছে। উদ্ধারকর্মীরা সান্তনা দিতে চাইলে রাজিয়া সুলতানা বলেন, তোমরা মিথ্যাবাদী, মিথ্যা বলো। আমার ছেলেকে এখনো খুঁজে দিচ্ছো না। ওরা আমার ছেলেরে খোঁজে না।
রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে অন্যান্য নিখোঁজদের স্বজনরাও অভিযোগ করেন, উদ্ধার কর্মীরা তাদের কাজ ঠিক মত করছেন না। ঠিকমত কাজ করলে অনেক আগেই নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া যেত। এত বিলম্ব হবে কেন?
এদিকে উদ্ধারকর্মীদের মতে একাধিক কারণে উদ্ধার কাজে বিলম্ব হচ্ছে। দুই নদীর মোহনা, নদীর গভীরতা, স্রোত এবং দুর্ঘটনার স্থান চিহ্নিত না হওয়ায় উদ্ধার কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্রলার ডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস। তাদের সাথে উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়েছেন নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত জীবিত বা মৃত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি ডুবে যাওয়া ট্রলারটিও।
ঘটনাস্থল চিহ্নিত হয়নি
উদ্ধারকাজে নিয়োজিতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীর কোন স্থানে ট্রলারটি ডুবেছে তা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি উদ্ধার কর্মীরা। ফলে প্রাথমিক তথ্য ও আনুমানিকভাবে স্থান নির্বাচন করে উদ্ধারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা বলেন, দুর্ঘটনায় যারা বেঁচে ফিরেছেন তাদের মতে ঘন কুয়াশার কারণে তারা নদীর কোন অংশে ছিলেন তা বুঝতে পারেনি। একই কারণে নদীর পাড়ে থাকা কেউ ঘটনাস্থল চিহ্নিত করতে পারছে না। ঘটনাস্থল চিহ্নিত না হওয়ায় অনুমানের উপর কাজ করছে উদ্ধার কর্মীরা।
নদীর স্রোত
বুধবার সকালে যখন ঘটনাটি ঘটে তখন নদীতে স্রোত ছিল। সে সময় স্রোতের কারণে নিখোঁজরা অন্য কোথাও ভেসে গেছে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না।
নদীর মোহনা
জানা যায়, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা নদীর মোহনা। একদিকে ধলেশ্বরী ও অন্যদিকে বুড়িগঙ্গা নদী। এমনস্থানে ট্রলার ডুবি হওয়ার কারণে ট্রলার ও নিখোঁজরা স্রোতে ভেসে কোন নদীর কোনদিকে চলে গেছে তা নির্ধারণ করতে পারছেন না উদ্ধার কর্মীরা।
নদীর পূর্ণতা ও গভীরতা
ধলেশ্বরী নদীর এই অংশটি অনেক বড় ও গভীর। অন্যদিকে ঘটনাস্থল চিহ্নিত না হওয়ায় আনুমানিকভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে উদ্ধার কর্মীরা। আনুমানিক ধারণা নিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালিত হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবী করেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, বুধবার সারাদিন তারা নদীতে ছিলেন। তিনটি ইউনিট কাজ করেছে। তাদের চেষ্টায় কোনো কমতি নেই। তবু কিছু কারণে উদ্ধার কাজে বিলম্ব হচ্ছে। উদ্ধার কাজে গতি আনতে সোনার মেশিনও ব্যবহার করছেন তারা। শুক্রবার আবারও উদ্ধারে কাজ শুরু করবেন তারা।
এদিকে ট্রলারটিকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া এমভি ফারহান-৬ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি জব্দ করে লঞ্চের চালক মাষ্টারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ-পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বুধবার রাতে বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
আসামিরা হলেন- এমভি ফারহান-৬ যাত্রীবাহী লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসান, ড্রাইভার জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া ও সুকানি জসিম মোল্লা। বুধবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেন নৌ-পুলিশ। তাদের মধ্যে উল্লেখিত তিনজনকে আসামি করা হয়। একজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।